facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর সোমবার, ২০২৪

Walton

গিবত থেকে বাঁচবেন যে উপায়ে


০৭ জুলাই ২০২৩ শুক্রবার, ১০:৫৫  এএম

ধর্ম ডেস্ক

শেয়ার বিজনেস24.কম


গিবত থেকে বাঁচবেন যে উপায়ে

 

মানুষ অনায়েসে, নিজের অবচেতনে যেসব গুনাহ করে ফেলে তার একটি হলো গিবত। ইসলামের দৃষ্টিতে গিবত বা পরনিন্দা বলা হয়, কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা। হতে পারে দোষটি তার মধ্যে আছে। কিন্তু এই আলোচিত দোষটির কথা শুনলে সে নির্ঘাত মনে ব্যথা পাবে। তাহলে এটাই গিবত।

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান ‘গিবত’ কী? সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, তোমার ভাই যে কথা অপছন্দ করে তার সম্পর্কে সে কথা বলার নাম গিবত।

জিজ্ঞেস করা হল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তবেই তুমি তার ‘গিবত’ করলে। আর যদি না থাকে তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে।’(মুসলিম; মিশকাত. হাদিস, ৪৮২৮)

গিবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর তোমরা একে অপরের গিবত করোনা। তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করবে যে, সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাবে। নিশ্চয়ই তোমরা এটাকে অপছন্দ করবে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চই আল্লাহ তাআলা সিমাহীন ক্ষমাকারী এবং দয়ালু।’ ( সূরা হুজরাত, আয়াত, ১২)

গিবতের অপরাধ থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক কঠিন কাজ। কারণ আল্লাহ তাআলা ব্যভিচারের মতো কঠিন অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন; কিন্তু গিবতের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। গিবতের ভয়াবহতা এবং তা থেকে মুক্তি লাভের উপায় হাদিসে এসেছে এভাবে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গিবত বা পরনিন্দা ব্যভিচার থেকেও গুরুতর অপরাধ। সাহাবারা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! গিবত কীভাবে ব্যভিচার অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ হতে পারে?’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ব্যভিচার করার পর মানুষ আল্লাহর কাছে তওবা করলে আল্লাহ তাআলা তওবা কবুল করেন। কিন্তু গিবতকারী ব্যক্তিকে যে পর্যন্ত ওই ব্যক্তি (যার গিবত করা হয়েছে) ক্ষমা না করে; ততোক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না।’ (মিশকাত)।

গিবতের মতো পাপটি মানুষ মূলত মুখের মাধ্যমে এবং অন্যকে বলার মাধ্যমে করে থাকে। এজন্য এই পাপ থেকে বাঁচতে সবার উচিত পারতপক্ষে ভাল কথা বলা। অন্যথায় চুপ থাকা উচিত। কারণ চুপ থাকাই মূলত মানুষকে গিবত থেকে রক্ষা করতে পারে। যখন কথাই হবে না, তখন তো আর গীবতের সম্ভাবনা থাকে না।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,


       من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليقل خيرا أو ليصمت  
 

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। -(সহীহ বুখারী, হাদীস:৫৬৭২, সহীহ মুসলিম, হাদীস:৪৮)

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,


     من يضمن لي ما بين لحييه وما بين رجليه أضمن له الجنة

 যে ব্যক্তি তার দুই চোওয়ালের মাঝের অঙ্গ (মুখ) এবং দুই রানের মধ্যবর্তী অঙ্গ (লজ্জাস্থান) হেফাজতের দায়িত্ব নিবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিব।- (সহীহ বুখারী, হাদীস:৬১০৯)

আরেক হাদীসে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
     الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِه وَيَدِه

মুসলমান সেই যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। -(সহীহ বুখারী, হাদীস:১০, সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৪৬)

অপর এক হাদীসে এসেছে,

       عن عقبة بن عامر قال قلت يا رسول الله ما النجاة ؟ قال أمسك عليك لسانك وليسعك بيتك وابك على خطيئتك 

 উকবা ইবনে আমের রা. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, মুক্তি কীসে? তিনি বললেন, তুমি তোমার জবান সংযত রাখ। তোমার ঘর যেন তোমার জন্য প্রশস্ত হয়। এবং তোমার ভুলের জন্য ক্রন্দন কর। -(সুনানে তিরমিজী,হাদীস:২৪০৬, ইমাম তিরমিজী রহ. বলেন, এটি হাসান)

কারো গিবত করার পর সে ব্যক্তি যদি মারা যায় কিংবা কোনো দূর এলাকায় চলে যায় অথবা কোথায় আছে সে তথ্য জানা না থাকে, তবে আল্লাহর কাছে তার গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে গিবতের একটি ক্ষতিপূরণ হলো, তুমি যার গিবত বা কুৎসা রটনায় লিপ্ত ছিলে তার জন্য এভাবে দোয়া করো-

‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ও (যার গিবত করা হয়েছে) তার গোনাহ মাফ করে দাও।’ (মিশকাত)।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: