০৪ মার্চ ২০২৫ মঙ্গলবার, ০২:৪৭ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঘটে যাওয়া গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত গুম-সংক্রান্ত কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। কমিশনের প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, জানিয়েছেন যে জোরপূর্বক গুমের শিকার অন্তত ৩৩০ জন এখনো নিখোঁজ এবং তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
রাজধানীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এই ৩৩০ জনের কেউ ভারতীয় কারাগারে বা অন্য কোথাও আটক রয়েছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, "গত আড়াই বছরে ভারতের কারাগারে বন্দি ১,০৬৭ জন বাংলাদেশির তালিকা আমরা পেয়েছি। যাচাই করে দেখা হচ্ছে, তাদের মধ্যে কেউ গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় আছেন কিনা।"
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ভারত থেকে ফেরত পাঠানো ১৪০ জনের মধ্যে কোনো গুম হওয়া ব্যক্তির খোঁজ মেলেনি বলেও জানান তিনি।
কমিশন মোট ১,৭৫২টি গুমের অভিযোগ পেয়েছে, যার মধ্যে ১,০০০টির তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টতা।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক গুমের নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত কিনা, জানতে চাইলে মইনুল ইসলাম বলেন, "তদন্তে আমরা তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছি।"
কমিশন ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ৪৫ জন সদস্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। ৫ আগস্টের পর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) গুমের তথ্য মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে কমিশন প্রধান বলেন, "এই দায় কার, তা খতিয়ে দেখা হবে।"
ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধানসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। মইনুল ইসলাম বলেন, "যদি তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হয়, তাহলে অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে।"
কমিশন সদস্য নাবিলা ইদ্রিস জানান, তদন্তে কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে গুমের মতো কাজ করতেন। তবে এখন যারা অভিযুক্তদের পালাতে সাহায্য করছেন, তারা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে। কমিশন ১৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে `আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ` শিরোনামে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, "গত ১৫ বছরে সংঘটিত গুমের ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।"
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ন্যায়বিচার ও প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার দাবি জানাচ্ছে।
কমিশন জানিয়েছে, তারা দ্রুত চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। তবে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।