facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০৪ জানুয়ারি শনিবার, ২০২৫

Walton

গ্রহাণুর ধুলা নিয়ে ফিরল নাসার যান


২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সোমবার, ১০:২৫  এএম

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক

শেয়ার বিজনেস24.কম


গ্রহাণুর ধুলা নিয়ে ফিরল নাসার যান

ঐতিহাসিক অভিযান শেষে সফলভাবে পৃথিবীতে বেনুুই গ্রহাণুর ‘মাটি’ নিয়ে এলো যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার অনুসন্ধান যান ওসাইরাস-রেক্স। আড়াইশ গ্রাম মাটিসহ যানটির বিশেষ ক্যাপসুল গতকাল রবিবার সকালে (বাংলাদেশ সময় রাত ৮:৫৩) যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা অঙ্গরাজ্যের মরুভূমিতে নেমে আসে।

পৃথিবী গঠিত হওয়া এবং এখানে প্রাণের উদ্ভব সম্পর্কে বড় প্রশ্নের জবাব মিলতে পারে ওসাইরাসের নিয়ে আসা এই ‘মহামূল্য’ ধুলা থেকে। এ পর্যন্ত মহাকাশের কোনো গ্রহাণু থেকে সংগ্রহ করা এটাই সবচেয়ে বড় নমুনা।

আর নাসার ক্ষেত্রে প্রথম কোনো গ্রহাণুর নমুনা সংগ্রহের ঘটনা। মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে তাই একে খুব বড় ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ক্যাপসুলটি অবতরণের পর তা নিরাপত্তা আবরণে মোড়ানো হয়। এর পরপরই তা হেলিকপ্টারের কাছের একটি ‘ক্লিন রুমে’ প্রাথমিকভাবে পরিষ্কারের জন্য নেওয়ার কথা।

ভেতরের উপাদান পরীক্ষা করা হবে টেক্সাসে নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে। আজ সোমবারই বিমানে করে ক্যাপসুলটি টেক্সাসে নেওয়া হবে। ২০০৪ সালে নাসার এ রকম একটি অভিযান প্যারাশুট সুবিধা কাজ না করায় শেষ মুহূর্তে এসে ব্যর্থ হয়। এবার তাই নির্ভুলতার জন্য আগেই বারবার পরীক্ষা করা হয়েছে।
কী থাকতে পারে ক্যাপসুলে

ধুলা বলা হলেও বিজ্ঞানীরা আশা করছেন ক্যাপসুলটির বয়ে আনা জিনিসটি হবে বিভিন্ন আকারের পাথুরে টুকরার মিশ্রণ। এগুলোর আকার হবে কয়েক মিলিমিটার থেকে শুরু করে ধুলা সমান পর্যন্ত। উপাদানগুলো হবে খুব গাঢ়, প্রায় কালো ও খুব ঝুরঝুরে। নমুনায় কিছু জৈব অণু থাকাও অসম্ভব নয়।

নাসা ধুলাগুলো পরীক্ষার প্রাথমিক ফলাফল জানাবে ১১ অক্টোবর। নমুনার বেশির ভাগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রাখা হবে। এক-চতুর্থাংশ তাত্ক্ষণিক পরীক্ষায় ব্যবহার করা হবে। অল্প কিছু দেওয়া হবে অভিযানের সহযোগী জাপান ও কানাডাকে। জাপানও তার ২০২০ সালের এক অভিযানে সংগ্রহ করা গ্রহাণুর ধুলার কয়েক গ্রাম দিয়েছিল নাসাকে।
যে কারণে এত গুরুত্ব

যান্ত্রিক হাত দিয়ে ওসাইরাস গ্রহাণুর পৃষ্ঠ থেকে এই ধুলা তুলে এনেছে। পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণের উৎস কী, বিজ্ঞানীদের সেই গভীরতম প্রশ্নের জবাব মিলতে পারে এ নমুনা থেকে। পৃথিবী ও আমাদের সৌরজগৎ কিভাবে গঠিত হলো, কেন এটি প্রাণের বসবাসযোগ্য, আবহমণ্ডলের বায়ু বা মহাসাগরের পানি কোথা থেকে এলো এবং সর্বোপরি পৃথিবীর সব প্রাণ গঠনেই প্রয়োজনীয় জৈব অণুর উৎস কী—এসব জটিল প্রশ্নের জবাব খোঁজা হবে।

বিজ্ঞানীদের বিদ্যমান ধারণা হলো, প্রাণের জন্য সহায়ক উপাদানগুলোর অনেকই পৃথিবীর আদিকালে ছুটে এসে আছড়ে পড়া বেনুুর মতো গ্রহাণু থেকে পাওয়া। বেনুুতে পানির পরিমাণ হতে পারে এর ওজনের ১০ শতাংশ। দেখা হবে ওই পানির হাইড্রোজেন অণুর অনুপাত পৃথিবীর সাগরের মতোই কি না। শুরুর দিকের অতি তাপের জন্য পৃথিবীর বেশির ভাগ পানিই শুকিয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। বেনুু ও পৃথিবীর পানির ধরন এক হলে এ ধারণাটাই জোরদার হবে যে সুদূর অতীতে আছড়ে পড়া গ্রহাণুই পৃথিবীর পানির উৎস।

বেনুুতে সম্ভবত এর ওজনের ৫ থেকে ১০ শতাংশ কার্বনও আছে। জানা মতে, পৃথিবীর প্রাণ জৈব রাসায়নিক উপাদানে তৈরি। প্রশ্ন রয়েছে নবীন পৃথিবীতে জীবনের জাগরণের জন্য পানির পাশাপাশি কি জটিল অণুকেও মহাকাশ থেকে আসতে হয়েছিল? বেনুর ধূলিরাশি হয়তো এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

যেভাবে পৃথিবীর পথে
২০২০ সালে বেনুর বুক থেকে নমুনা নেয় ওসাইরাস। পৃথিবীর পথে ফিরতি যাত্রা শুরু করে ২০২১ সালে। গতকাল ঘণ্টায় ২৭ হাজার মাইল বেগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এর ক্যাপসুল। এর ঠিক চার ঘণ্টা ১৩ মিনিট আগে তাকে পৃথিবীর পথে ছেড়ে দিয়েছিল ওসাইরাস। হিট শিল্ড ও পর পর দুটি প্যারাশুট যাত্রার শেষ পর্যায়ে ক্যাপসুলের গতি অনেক কমিয়ে আনে। তবে প্রধান প্যারাশুটটি পরিকল্পনার চেয়ে বেশ আগেই খুলে যায়। নাসা অভিযানটি শুরু করে ২০১৬ সালে। যেতে-আসতে ওসাইরাস-রেক্স ভ্রমণ করেছে ৭০০ কোটি কিলোমিটার।

সবচেয়ে বিপজ্জনক গ্রহাণু বেনুই
বেনুই প্রতি ছয় বছরে একবার পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে। গ্রহাণুটি নিউ ইয়র্কের সুউচ্চ এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের উচ্চতার (৪৪৩ মিটার) চেয়েও বড়। আগামী শতাব্দীর শেষের দিকে এর পৃথিবীতে আঘাত হানার ক্ষীণ একটি আশঙ্কা রয়েছে। সেটি হচ্ছে একটি কয়েন টস করলে পর পর ১১ বার ‘হেড’ পড়ার সম্ভাবনা যতটা ঠিক ততটুকু। তবে এ ধরনের আকারের গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবীর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

নতুন অভিযানে ওসাইরাস
ক্যাপসুলটি ছেড়ে দিয়ে গতকালই মহাকাশে নতুন যাত্রায় চলে গেছে ওসাইরাস-রেক্স। তার এবারের গন্তব্য অ্যাপোফিস নামের হাজারখানেক ফুট চওড়া আরেক গ্রহাণু। সেটি ২০২৯ সালে পৃথিবী থেকে ২০ হাজার মাইলের মধ্যে চলে আসবে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি ও নাসা

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি -এর সর্বশেষ