চলে গেলেন ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানের স্রষ্টা আবু জাফর

‘এই পদ্মা এই মেঘনা’, ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম’, কিংবা ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে’-এর মতো অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা, গীতিকার ও সুরকার আবু জাফর আর নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা ৩০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন লোকগবেষক সাইমন জাকারিয়া। বয়সজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন এই বরেণ্য সংগীতশিল্পী।

জীবন ও কর্ম

আবু জাফর একাধারে গীতিকার, সুরকার, কবি, সংগীতশিল্পী এবং শিক্ষক। তিনি চুয়াডাঙ্গা কলেজ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর জন্ম কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের গড়ের বাড়ি কাঞ্চনপুর গ্রামে। বাবার নাম খোন্দকার মো. জমির উদ্দিন।

আবু জাফর ছিলেন রাজশাহী ও ঢাকা বেতার এবং টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী ও গীতিকার। তাঁর রচিত দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গানগুলো শ্রোতাদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছিল। তাঁর সৃষ্ট গানের মধ্যে অন্যতম ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ গানটি বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি গানের তালিকায় স্থান পায়।

উল্লেখযোগ্য রচনা

গীতিকার ও সুরকার হিসেবে আবু জাফরের অসাধারণ গুণ ছিল। তাঁর রচিত ও সুরারোপিত বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে:

• এই পদ্মা এই মেঘনা
• তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম
• নিন্দার কাঁটা যদি না বিঁধিল গায়ে
• আমি হেলেন কিংবা মমতাজকে দেখিনি
• তুমি রাত আমি রাতজাগা পাখি

এই গানের অনেকগুলোতেই তিনি নিজেই কণ্ঠ দিয়েছেন। ক্ষেত্রবিশেষে তাঁর সঙ্গে যুগল কণ্ঠে গান গেয়েছেন তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী ফরিদা পারভীন।

সাহিত্যিক অবদান

সংগীতের পাশাপাশি আবু জাফর ছিলেন একজন প্রতিভাবান লেখক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

• নতুন রাত্রি পুরোনো দিন (কাব্য)
• বাজারে দুর্নাম তবু তুমিই সর্বস্ব (কাব্য)
• বিপ্লবোত্তর সোভিয়েত কবিতা (অনুবাদ কাব্য)

শেষ শ্রদ্ধা

বাংলা সংগীত ও সাহিত্যে তাঁর অবদান অনন্য। গানের বাণী, সুর আর আবেগ দিয়ে তিনি জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন। আবু জাফরের এই অনুপম সৃষ্টিকর্ম বাংলা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে গেছে, যা বহুদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।