ঝড় তুলেছে বন্ধ খুলনা প্রিন্টিং: মাসেই শেয়ার দর বেড়েছে তিন গুণ!

শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে এ কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে প্রায় তিন গুণ। এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

গত সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৪ টাকা বা ২৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ টাকায়। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২৬ ডিসেম্বর খুলনা প্রিন্টিংয়ের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ৭ টাকা ৯০ পয়সা, যা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যেরও কম। এক মাসের ব্যবধানে এ দাম বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়ে গেছে।

বন্ধ থাকা কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধি কেন?

খুলনা প্রিন্টিং দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ২০২০ সালের পর থেকে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। সর্বশেষ ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি মাত্র ২৫ পয়সা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। লভ্যাংশ দিতে না পারায় কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়। এত কিছুর পরও কীভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম এভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ারবাজারে মন্দাভাবের কারণে কিছু চক্র কারসাজির মাধ্যমে খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছে। এমন বন্ধ এবং দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম এক মাসে তিন গুণ বাড়া স্বাভাবিক ঘটনা নয়।

কারসাজির প্রমাণ

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কারসাজিকারকরা সাধারণত স্বল্প ও মাঝারি মূলধনি কোম্পানিগুলোর দিকে ঝোঁকে। কারণ, অল্প বিনিয়োগেই এ ধরনের শেয়ারের দাম সহজে বাড়ানো সম্ভব। খুলনা প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে একই পথ অনুসরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কতা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্ধ এবং দুর্বল মানের কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি বাড়ানো উচিত। এমন মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কোম্পানির প্রোফাইল

২০১৪ সালের আগস্টে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া খুলনা প্রিন্টিংয়ের পরিশোধিত মূলধন ৭৩ কোটি টাকা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৭ কোটি ৩০ লাখ শেয়ার রয়েছে কোম্পানিটির। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারের ৪০ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে এবং বাকি ৬০ শতাংশ রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে।

খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বাজারের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে সচেতন থাকা এবং যথাযথভাবে তথ্য যাচাই করে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।