facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ অক্টোবর শনিবার, ২০২৪

Walton

টুপিতে নকশার কাজ করে স্বাবলম্বী ১৩ হাজার নারী


১৬ এপ্রিল ২০২৩ রবিবার, ০৭:২২  পিএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


টুপিতে নকশার কাজ করে স্বাবলম্বী ১৩ হাজার নারী

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ৫০ গ্রামের প্রায় ১৩ হাজার নারী টুপিতে নকশার কাজ করে দরিদ্রতাকে জয় করেছেন। তাদের বানানো টুপি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের মুসলিমপ্রধান দেশের বাজারে স্থান করে নিয়েছে। এর ফলে দেশে আসছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে শাহবাজ গ্রাম। এখানের বেশির ভাগ বাড়িতেই টিনের চালা। সূর্যের আলোয় দিনের বেলা সেই টিন চকচক করে। গ্রামবাসী জানান, ১৩ বছর আগে আবদুল আউয়াল মণ্ডলের হাত ধরে এখানকার ১৫ জন নারী টুপিতে নকশার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে গ্রামটির ৮০০ নারী এ কাজের সঙ্গে জড়িত। এসব নারীর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাব্দী, থানাপাড়া, খোপাতি, হলদিবাড়ী, শহীদবাগ, হারাগাছ, রাজিব, গনাই, নিজপাড়া, ঢুষমারা, হয়বৎখাঁ, নাজিরদহ, পল্লীমারী, ভূতছাড়া, গদাই, পাঞ্জর ভাঙ্গার, গোপীডাঙ্গা, প্রাণনাথসহ আশপাশের ৫০টি গ্রামের নারীরা এখন টুপিতে নকশার কাজ করছেন।

সরেজমিনে কয়েকটি গ্রামে দেখা যায়, সুনিপুণ হাতের স্পর্শে তৈরি হচ্ছে কারুকাজ খচিত টুপি। সুই ও সুতা নিয়ে একনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন নারীরা। কেউ ব্যস্ত টুপির ওপর নকশা বুনতে, কেউ আবার কাপড় কাটতে। অবসরে সবাই বসে পড়েছেন সুই-সুতা নিয়ে। এসব গ্রামের নারীরা আগে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতেন, স্বামীর গালমন্দও শুনতেন। কিন্তু টুপির কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ায় পরিবারে তাদের সম্মানজনক অবস্থান তৈরি হয়েছে।

টুপিতে নকশা তোলার কারিগর গনাই গ্রামের জোসনা বেগম বলেন, সাদা কাপড়কে কাটিং করে টুপি তৈরির উপযুক্ত করা হয়। কাটিং কারিগর প্রতি টুপিতে ১০ টাকা মজুরি পান। এর মধ্যে নকশা করতে হয়। এরপর মেশিনে সেলাই করে নানা নকশা করা হয়। প্রতিটি টুপি সেলাইয়ের জন্য শ্রমিকরা ৪০ টাকা পান। হাসুর কাজের জন্য দেয়া হয় ২০ টাকা। নারীরা সুই-সুতা দিয়ে নকশা করার জন্য পারিশ্রমিক পান ৪৫০-৫৫০ টাকা। এ কাজে সুই-সুতা সরবরাহ করেন মালিক।

৯ বছর আগে বদরগঞ্জ উপজেলার আমরুল বাড়ি গ্রামের রবিউল ইসলামের সঙ্গে হলদিবাড়ী গ্রামের খাদিজা খাতুনের বিয়ে হয়। অভাবের তাড়নায় কিছুদিন পরই দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে টুপিতে নকশা তোলার কাজ শুরু করেন। এ কাজে প্রতি মাসে তার চার হাজার টাকা আয় হয়। বিগত আট বছরে নিজের আয় দিয়ে তিনি বাড়ি ও আবাদি জমি কিনেছেন।

নিজপাড়া গ্রামের শাহাজাদি বেগমের একসময় ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই ছিল না। টুপিতে নকশার কাজ করে টিনের বাড়ি ও ৩৮ শতক জমি কিনেছেন। গাছ-গাছালিঘেরা বাড়িতে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনের পাশাপাশি টুপিতে নকশার কাজ করেন। এতে মাসে পাঁচ হাজার টাকা আয় হয়। নিজের আয় দিয়ে শাহাজাদি সন্তানদের বিদ্যালয়েও পাঠাচ্ছেন।

সাব্দী গ্রামের লাভলী আক্তার বলেন, সংসারের অন্য কাজের সঙ্গে টুপির কাজও করা যায়। এতে মাসে চার হাজার টাকা আয় হয়।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আঙ্গুরা বেগম বলেন, আগে কাউনিয়ার বিভিন্ন গ্রামের নারীরা শ্বশুরবাড়িতে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতেন। এখন টুপিতে নকশার কাজ করে বাড়তি আয় করায় তারা শ্বশুরবাড়িতে সবার সম্মান পাচ্ছেন।

উপজেলা পরিষদের মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রেবেকা ইয়াছমিন বলেন, নারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মমুখী নারীদের সব সময় সহযোগিতাও করা হচ্ছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: