facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৩ নভেম্বর বুধবার, ২০২৪

Walton

ডরিন পাওয়ারের এমডি তাহজীব গ্রেপ্তার


০৯ নভেম্বর ২০২৪ শনিবার, ১২:৩৮  পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


ডরিন পাওয়ারের এমডি তাহজীব গ্রেপ্তার

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানি ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাহজীব আলম সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাতে ঢাকার সাভারে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস গণমাধ্যমকে তাহজীব আলম সিদ্দিকীর গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০১৩ সালে ঝিনাইদহ শহরে বিক্ষোভ মিছিলে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত নেতা আবদুস সালাম নিহত হন। সেই ঘটনায় সম্প্রতি সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। ওই মামলায় গতকাল রাতে সাভার থেকে সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাঁকে ঝিনাইদহ সদর থানায় নিয়ে আসা হয়।

আবদুল্লাহ আল মামুন আরও জানান, গত ৪ আগস্ট জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর এবং জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা আরও দুটি মামলায় তাহজীব আলম সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক তিন মামলায় এক দিন করে মোট তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

ঝিনাইদহে জামায়াতের কর্মী আবদুস সালাম হত্যার ঘটনায় ২৭ আগস্ট একটি মামলা করা হয়। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীসহ আওয়ামী লীগের ২৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত আবদুস সালামের শ্বশুর ও কৃষি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

ঝিনাইদহ-২ আসন (সদর আংশিক ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা) থেকে তাহজীব আলম সিদ্দিকী ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকার প্রার্থী হিসেবে আবারও জয়ী হন। তাঁর বাবা নূরে আলম সিদ্দিকী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।

সাবেক সংসদ সদস্যের প্রতিষ্ঠান ডরিন পাওয়ারের ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রি

সরকার পরিবর্তনের পর বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রি শুরু করেছে ডরিন পাওয়ার। এরই মধ্যে দুটি বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিয়েছে কোম্পানিটি। গত ফেব্রুয়ারিতে এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ নতুন করে আর বাড়বে না, এমন আশঙ্কা থেকেই ডরিন পাওয়ার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেয় বলে জানা গেছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ডরিন পাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রির এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার কোম্পানিটির ফেনীর ২২ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতি বিক্রির তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গত ২১ আগস্ট কোম্পানিটি তাদের টাঙ্গাইলের ২২ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতি বিক্রির কথাও জানিয়েছিল।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির যন্ত্রপাতি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় ডরিন পাওয়ার। এই দুটিসহ তাদের মোট তিনটি বিদ্যুকেন্দ্রের মেয়াদ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। এ তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো টাঙ্গাইল, ফেনী ও নরসিংদী পাওয়ার প্ল্যান্ট। প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ২২ মেগাওয়াট করে মোট ৬৬ মেগাওয়াট। তারা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে ১৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারিতে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর চুক্তি নবায়নে উদ্যোগী হয় ডরিন পাওয়ার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চুক্তি নবায়নের আশ্বাস পেয়ে অপেক্ষায় ছিল তারা। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর এখন কোম্পানিটি মনে করছে যে তাদের সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তি নবায়নের সম্ভাবনা কম। এ কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতির পাশাপাশি জমিও বিক্রির চেষ্টা করছে তারা।

ডরিন পাওয়ারের মালিকানায় ছিল সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নুরে আলম সিদ্দিকীর পরিবার। বর্তমানে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে ও আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। আর চেয়ারম্যান হলেন তাহজীব আলম সিদ্দিকীর স্ত্রী আনজাবিন আলম সিদ্দিকী।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিদ্যুৎ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয় ডরিন পাওয়ার। ওই বছরই উল্লিখিত তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তিতে উৎপাদন শুরু করে। এ ছাড়া ডরিন পাওয়ারের আরও তিনটি সহযোগী বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। সেগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২২৫ মেগাওয়াট। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, নবাবগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা সাউদার্ন পাওয়ার জেনারেশন, মানিকগঞ্জে অবস্থিত ঢাকার নর্দার্ন পাওয়ার জেনারেশন ও চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন। ডরিন পাওয়ারের সহযোগী এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ ২০৩০ সালের পর শেষ হবে।

ডরিন পাওয়ার জানিয়েছে, টাঙ্গাইল ও ফেনীর দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ২০ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। রূপসী বাংলাদেশ গ্রুপ ও ট্রাস্ট মেরিন সার্ভিসেস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব যন্ত্রপাতি বিক্রি করা হয়। যন্ত্রপাতির পাশাপাশি দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমিও বিক্রির চেষ্টা চলছে।

জানতে চাইলে ডরিন পাওয়ারের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আমজাদ শাকিল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মূল কোম্পানির তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে দুটির চুক্তির মেয়াদ নবায়নের বিষয়ে আশ্বস্ত হতে না পেরে সেগুলোর যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই দুটি কেন্দ্রের জমিও বিক্রির চেষ্টা চলছে। অন্যটির মেয়াদ নবায়নের বিষয়ে আমরা এখনো আশাবাদী। সে জন্য সেটির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: