facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার, ২০২৫

Walton

ডিএসই ট্রেডে প্রয়োজন স্টপ লস, টেক প্রফিট, উন্নত অর্ডার সিস্টেম


০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার, ১১:১৯  পিএম

সাইফুল ইসলাম পিপন

শেয়ার বিজনেস24.কম


ডিএসই ট্রেডে প্রয়োজন স্টপ লস, টেক প্রফিট, উন্নত অর্ডার সিস্টেম

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাংলাদেশের মূল পুঁজিবাজার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু আধুনিক ট্রেডিং সুবিধার দিক থেকে এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। বিশেষ করে স্টপ লস (এসএল), টেক প্রফিট (টিপি) এবং অ্যাডভান্সড বাই-সেল অর্ডার সিস্টেমের অভাব বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর বাজারে এসব ফিচার দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য ট্রেডিংকে আরও নিরাপদ, স্বয়ংক্রিয় ও ঝুঁকিমুক্ত করেছে।

বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লেক্সট্রেড’ ব্যবহার করা হলেও এতে স্টপ লস (এসএল) এবং টেক প্রফিট (টিপি) সেট করার সুবিধা নেই। ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রতিটি ট্রেড ম্যানুয়ালি পর্যবেক্ষণ করতে হয়, যা অনেক সময় অস্বস্তিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক স্টক মার্কেটে এই সুবিধাগুলো স্ট্যান্ডার্ড হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা এখনো পুরনো পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল।

স্টপ লস (এসএল) না থাকার সমস্যাঃ বাজারের পতনের সময় বিনিয়োগকারীরা সময়মতো তাদের শেয়ার বিক্রি করতে না পারলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হন। SL সেট করার সুবিধা থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট মূল্যে শেয়ার বিক্রি হয়ে যেতো, যা ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতো।

টেক প্রফিট (টিপি)-এর অনুপস্থিতিঃ টেক প্রফিট (টিপি) ট্রেডারদের জন্য লাভ নির্ধারণের একটি স্বয়ংক্রিয় উপায়। এটি না থাকায় অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা চাহিদা অনুযায়ী লাভ তুলতে ব্যর্থ হন এবং বাজার ঘুরে গেলে মুনাফার সুযোগ হারিয়ে ফেলেন, এমনকি লসেও চলে আসেন।

অ্যাডভান্সড বাই-সেল অর্ডারের অভাবঃ উন্নত বাজারে ট্রেডাররা ট্রেইলিং স্টপ, লিমিট অর্ডার, আইসবার্গ অর্ডার ইত্যাদি ব্যবহার করে ট্রেডিং আরও কার্যকরী করে থাকেন। ডিএসইতে এই ফিচারগুলোর অনুপস্থিতি বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ ও অদক্ষ ট্রেডিংয়ে বাধ্য করছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন, এমনকি ভারতের মতো পুঁজিবাজারে স্টপ লস (এসএল), টেক প্রফিট (টিপি) ফিচার স্ট্যান্ডার্ড ট্রেডিং টুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। NASDAQ, NYSE, LSE এবং NSE-এর ট্রেডিং সফটওয়্যারে এই ফিচারগুলো থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা সহজেই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এছাড়া, অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নির্ভর ট্রেডিং উন্নত বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত, যেখানে স্বয়ংক্রিয় SL এবং TP সেট করার সুবিধা রয়েছে। অথচ DSE এখনো এই ধরনের আধুনিকীকরণ থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

উন্নত অর্ডার সিস্টেমের সম্ভাবনাঃ

ক) SL এবং TP সুবিধা চালু থাকলে বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজির অধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন, যা বিনিয়োগকারীদের তুলনামূলক সুরক্ষা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। খ) স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং সুবিধা চালু হলে ট্রেডারদের বাজারে সারাক্ষণ সক্রিয় থাকতে হবে না, বরং নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং পরিচালনা করতে পারবেন। গ) উন্নত ট্রেডিং সুবিধা থাকলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, যা সামগ্রিক বাজারের লিকুইডিটি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। ঘ) প্রযুক্তির আধুনিকায়ন তথা বিশ্বমানের ট্রেডিং সুবিধা যুক্ত হলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে এবং পুঁজিবাজার আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে। ঙ) উন্নত অর্ডার সিস্টেম বিনিয়োগকারীদের অতিরিক্ত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আরো সহজ হবে। চ) স্বয়ংক্রিয় অর্ডার এক্সিকিউশন থাকলে বারবার মার্কেট পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কমবে, এতে বিনিয়োগকারীদের মানসিক চাপ কমবে।

চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবায়নের উপায়ঃ

যদিও এসব আধুনিক ফিচার বাস্তবায়ন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তবে এটি অসম্ভব নয়। ডিএসই কর্তৃপক্ষ যদি উন্নত ট্রেডিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা নেয়, তাহলে দ্রুত এই পরিবর্তন আনা সম্ভব। এজন্য- উন্নত ট্রেডিং সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, বিনিয়োগকারীদের আধুনিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে, প্রযুক্তিগত ও আইনি সমন্বয় করতে হবে এবং এক্ষেত্রে বিদেশি স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করাও গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং সফটওয়্যারে স্টপ লস (এসএল), টেক প্রফিট (টিপি) ও অ্যাডভান্সড অর্ডার সিস্টেম যুক্ত করা হলে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি হ্রাস পাবে, বাজারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব হবে। আধুনিক পুঁজিবাজার গঠনের জন্য এ ধরনের উন্নত ট্রেডিং টুলস চালু করা সময়ের দাবি। ডিএসই কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে বিনিয়োগকারীরা একটি উন্নত ও নিরাপদ ট্রেডিং অভিজ্ঞতা পেতে পারেন।

লেখক : পুজিবাজার বিশ্লেষক 

মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

ইমেইলঃ [email protected]

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

শেয়ার বিজনেস কী? -এর সর্বশেষ