facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর শনিবার, ২০২৪

Walton

তালেবানের কাবুলে নারীদের ক্ষেত্রে শুধু `না আর না`


৩০ মে ২০২৪ বৃহস্পতিবার, ০৮:৪৬  পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

শেয়ার বিজনেস24.কম


তালেবানের কাবুলে নারীদের ক্ষেত্রে শুধু `না আর না`

আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে নারীদের ওপর শুধু ‘না’ আর ‘না’ আরোপ করা হয়েছে। এতটাই যে তারা একা দূরে কোথাও যেতে পারবেন না। একা উড়োজাহাজে চড়তে পারবেন না। এমনকি সরকারি কোনো দপ্তরেও যেতে পারবেন না, যদি না সঙ্গে কোনো পুরুষ থাকে।

আফগানিস্তানে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধের কারণে লাখ নারী স্বামীহারা হয়েছেন। তাই অনেক নারীর জন্যই মাহরাম খুঁজে পাওয়া কঠিন। নারীদের কেউ একা বাইরে যেতে চাইলে তাকে স্বামী কিংবা ভাই, কিংবা চাচা, কিংবা বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। একে বলা হচ্ছে ‘মাহরাম’। যার অর্থ পুরুষ সঙ্গী। যার সামনে ওই নারীর হিজাব পরা বাধ্যতামূলক নয়। এবং যাকে তার অভিভাবক বা রক্ষাকারী হিসেবে মনে করা হয়।

সম্প্রতি মারিয়াম (ছদ্মনাম) ও তার আরেক বান্ধবী মিলে কাবুলে তাদের সাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন ট্রান্সস্ক্রিপ্ট আনতে। কিন্তু ভবনে ঢোকার মুখেই তাদের আটকে দেওয়া হয়। বার্তা সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মারিয়াম বলেন, ‘ঢোকার মুখে তালেবান আমাদের বলল, সঙ্গে মাহরাম থাকতে হবে। কিন্তু সে সময় আমার ভাই কাজে ছিল, আমার বান্ধবীর ভাইও ছোট। আর তার বাবাও নেই।’

মারিয়াম বলেন, ‘আমি দেখলাম, এক পুরুষ ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। তাকে গিয়ে সমস্যার কথা বলতে তিনি সাহায্য করতে রাজি হলেন। এরপর তাকে আমাদের ভাই পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সাহস পেলাম।’ আফগানিস্তানে কড়া নিয়মকানুনে নারীরা কী করতে পারবেন, আর পারবেন না, তা বলা হয়েছে। আর এসব নিয়ম প্রণয়নকারীরা দাবি করেন, তারা ওই নারী ও তার পরিবারের সম্মান রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে এই নিয়মকানুন বলবৎ করেছেন।

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় এসেই এ ধরনের যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, বিভিন্ন দেশ সেসব পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। জবাবে তালেবান বলেছে, আফগানিস্তান ইসলামি আইন অনুসরণ এবং শরিয়ার অধীনে সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা করে থাকে। তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এএফপিকে বলেন, বাইরের দেশগুলোর নিজেদের মতো করে সংবেদনশীলতা রয়েছে। তারা হিংসা ও কুসংস্কারের ওপর ভিত্তি করে ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে। তাদের উচিত ইসলামি আইনের ও এর মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখানো।

আফগানিস্তানে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধের কারণে লাখ নারী স্বামীহারা হয়েছেন। তাই অনেক নারীর জন্যই মাহরাম খুঁজে পাওয়া কঠিন। শিরিন নামে ২৫ বছর বয়সী এক তরুণী বলেন, ‘অনেক নারীর বাড়িতে কোনো পুরুষ নেই।’ শিরিন অনলাইনে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন, কারণ নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষেধ।

শিরিন বলেন, তাদের স্বামী মারা গেছে, বা তাদের ছেলে সন্তান থাকলেও তারা অনেক ছোট। এ অবস্থায় এই নারীরাই বাড়ির প্রধানের ভূমিকায়। তাহলে তারা কোথায় মাহরাম পাবে। আফগানিস্তানের বেশ কয়েকজন নারী এএফপিকে বলেন, মাহরাম ছাড়া ভ্রমণ করলে একজন নারী গ্রেপ্তার হতে পারেন। শহর ও গ্রামীণ এলাকায় তল্লাশিচৌকিগুলোতে ব্যাপক তল্লাশি হয়।

শিরিন বলেন, গত বছর তিনি ও তার পরিবারের সব নারী মিলে মিনিবাসে করে বনভোজনে যাচ্ছিলেন। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তাদের এক পুরুষ ভাই। তিনি কারও মাহরাম না হওয়ায় তালেবান কর্তৃপক্ষ তাদের সেই যাত্রা আটকে দিয়েছিল। তালেবানের এক সদস্য শিরিনের সেই ভাইয়ের শার্টের কলার চেপে ধরে নিয়ে যান আর নারীদের বাড়ি ফিরতে নির্দেশ দেন।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে তালেবান সরকার নিয়ম করে, যেকোনো নারী ৭২ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করলে অবশ্যই সঙ্গে মাহরাম থাকতে হবে। পরের বছরের মার্চে তারা আইন জারি করে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে কোনো নারী একা ভ্রমণ করতে পারবেন না। ফলে কিছু নারী যারা বিদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাচ্ছিলেন, তাদের দেশ ছাড়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়।

মাহরামের এই প্রথা বেশির ভাগ মুসলিম দেশে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু কিছু দেশের সরকার তা মানতে বাধ্য করেছে। ইসলাম বিশেষজ্ঞ ও লেখক স্লিমান জেগিদুর বলেন, কিন্তু আফগানিস্তান ‘আদর্শিক শাসনের অধীনে পরিচালিত হয়। এখানে কোরআন ও শরিয়া হচ্ছে ক্ষমতার মূল শক্তি।’

যেসব মুসলিম দেশ নারী অধিকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি কট্টর অবস্থানে ছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল সৌদি আরব। সেই সৌদি আরবও এখন মক্কায় নারীদের হজ করার অনুমতি দিয়েছে। সেখানে আফগান নারীদের সেই অধিকার দিচ্ছে না তালেবান সরকার।

জাতিসংঘের একটি সংস্থার কর্মী স্পোজমে এএফপিকে বলেন, ৮০ বছর বয়সী বিধবা মায়ের স্বপ্ন মৃত্যুর আগে হজ করার। কিন্তু ভ্রমণসংক্রান্ত একটি সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, মাহরাম ছাড়া তিনি বাইরে যেতে পারবেন না।

৩৭ বছর বয়সী স্পোজমের বাবা মারা গেছেন আর ভাই বিদেশে থাকেন। এই নারী চাকরি করে ভালো বেতন পেলেও মাহরাম না থাকার কারণে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে গিয়ে এই নারীকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।

স্পোজমে বলেন, ‘বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় আমি বাবার ছবি ব্যবহার করেছি আর আঙুলের ছাপের জায়গায় বোনের আঙুলের ছাপ দিয়েছি। তালেবান কৃর্তপক্ষ যদি এটি ধরতে পারে, তাহলে তারা আমাকে মারধর করে কারাগারে পাঠাবে।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইটআরডব্লিউ) কর্মী সাহার ফেতরাত বলেন, দেশটিতে নারীদের জন্য এখন মাধ্যমিক স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, নির্দিষ্ট কিছু চাকরি, পার্ক ও ব্যায়ামাগারে যাওয়া নিষিদ্ধ। মাহরাম নীতি নারীদের বাড়িতে ও বাড়ির বা্মইরে আটকে দিচ্ছে, যা অত্যন্ত অসম্মানজনক।

নারী উদ্যোক্তাদের পরামর্শক ২৫ বছর বয়সী খাদিজা বলেন, ‘অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় কাবুলের পরিস্থিতি আলাদা। রাজধানীতে আপনি মাহরাম ছাড়াও কেনাকাটা করতে বিপণিবিতানে যেতে পারবেন।বাস্তবতা হলো, অত্যন্ত রক্ষণশীল গ্রামীণ এলাকায় এসব অনুশাসন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়। এসব নিয়মের কারণে দাতব্য সংস্থা ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো তাদের নারী কর্মীদের মাহরাম রাখার জন্য অতিরিক্ত বেতন দেয়।

খাদিজার ৩২ বছর বয়সী ভাই আহমদ মা ও তার চার বোনের জন্য রক্তের সম্পর্কের মাহরাম। আমাদের এতজনের ভেতরে তাকে নিয়ে অনেক জটিলতা। তার জন্যও বিষয়টি অনেক জটিল। আহমদ বলেন, ‘আমি বাড়িতে একমাত্র পুরুষ। আমার নিজেরও কাজ আছে। সেগুলোও আমাকে করতে হয়।’

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: