facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৬ অক্টোবর বুধবার, ২০২৪

Walton

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার


১৬ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার, ১০:০৫  এএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার

দ্রব্যমূল্যের আগুনে পুড়ছে সব শ্রেণির মানুষ। চাল, ডাল, ডিম, সবজি থেকে শুরু করে সব পণ্যের দামই এখন লাগামছাড়া। এতদিন সবজি দিয়ে মাছ-মাংসের ঘাটতি কিছুটা পূরণের চেষ্টা করা গেলেও বেশ কিছুদিন থেকে সবজির দিকে হাত বাড়ানো দুঃসাহসিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আগে যারা কেজি হিসেবে সবজি কিনতেন, তাদের অনেকেই এখন ‘পোয়ায়’ নেমে যেতে হচ্ছে। পেঁপে, আলু ছাড়া খুব কম সবজিই মিলছে কেজিতে ১০০ টাকার নিচে। নানা চেষ্টাতেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বাজার পরিস্থিতি। কখনও দায় চাপানো হচ্ছে ‘সিন্ডিকেট’-এর ওপর, কখনও বা বৈরী প্রকৃতিকে দাঁড় করানো হচ্ছে কাঠগড়ায়। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীবাসীকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ২০টি স্থানে সুলভমূল্যে সবজি বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। গতকাল অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কার্যক্রমটি উদ্বোধন করেন। তুলনামূলক কম দামের সবজিগুলোর মধ্যে থাকছে ৫ কেজি আলু ১৫০ টাকায়, ১ ডজন ডিম ১৩০ টাকায়, ১ কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকায়। তা ছাড়া ১ কেজি মিষ্টিকুমড়া, করলা, পটোল, কচুরমুখী এবং কাঁচা মরিচ ১০০ গ্রাম ও ২০ টাকা দরে ৩ কেজি পেঁপেসহ ২৫০ টাকা, ১ পিস লাউ ৫০ টাকাসহ সর্বমোট ১০টি পণ্যের দাম ধরা হয়েছে ৬৫০ টাকা।

রাজধানীর যে ২০ পয়েন্টে সুলভমূল্যের সবজি করা হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে খাদ্য ভবন, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মিরপুর-১০, বাসাবো, বসিলা, রায়েরবাজার, রাজারবাগ, মুগদা-উত্তর, মুগদা-দক্ষিণ, পলাশি মোড়, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, বেগুনবাড়ী, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কামরাঙ্গিরচর, রামপুরা, ঝিগাতলা।

যা বললেন উপদেষ্টারা

ট্রাকসেল কার্যক্রম উদ্বোধন করে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভোক্তারা যাতে সুলভমূল্যে সমস্ত কিছু পায় সেজন্য এই প্রচেষ্টা। এ কাজে আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করি।

কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ন্যায্যমূল্যে ডিম, আলু, পেঁয়াজ, সবজি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমরা এই কার্যক্রম নিয়েছি।

বাজারের প্রতিটি স্তরে যে সিন্ডিকেট থাকার অভিযোগ রয়েছে, সেটি দমনে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি আপনাদের (সাংবাদিক) সহযোগিতা চাই। আপনারা ইনভেস্টিগেশন করে আমাদের জানান রাস্তায় কোথায় চাঁদাবাজি হয়। আমরা অবশ্যই চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেব। আমাদের গোয়েন্দা হলেন আপনারা।

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বাজার ব্যবস্থা নিয়ে বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

উপদেষ্টা আরও বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ আমরা মোকাবিলা করছি। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। বন্যায় বহু এলাকায় ফসল নষ্ট হয়েছে, যে কারণে শাক-সবজির দাম বেশি। কিন্তু অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের একটা বড় প্রভাব আছে। সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য আমরা কাজ করছি। বিগত সরকার ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে দুর্বল করেছে। তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, এটা কার্যকর নয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার হার্ডলাইনে (কঠোর অবস্থান) যাবে। সরকারের কাছে তথ্য আছে, অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে সরকার তাদের গ্রেপ্তার করবে। আমরা ভাবছি যে আমাদের তো হার্ডলাইনে যেতে হবে। নাহলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

ক্রেতাদের কথা

কদমতলী থেকে ওএমএসের পণ্য কিনতে এসেছিলেন সেলিনা খাতুন। তিনি বলেন, চাল ও আটা নিতে এসেছিলাম। এসে দেখি তরিতরকারি বিক্রি করা হচ্ছে। এখানে দামও কম পাচ্ছি। তা ছাড়া এলাকায় ওএমএসের মাল (পণ্য) কিনতে গেলে লজ্জা লাগে, তাই এত দূরে এসেছি। তিনি বলেন, এটি ভালো উদ্যোগ তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি সরকার বাজারের বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দাম কমাতে পারে।

শাহজাহানপুর এলাকা থেকে আসা ফেরদৌসী আক্তার নামে অপর ক্রেতা বলেন, আমরা এলাকা থেকে ওএমএসের পণ্য তুলতে পারি না। বাধ্য হয়ে সচিবালয়ে এসেছি। এভাবে আসলে বাজার ঠিক হবে না। মানুষের পক্ষে এত দূর থেকে আসাও সম্ভব হবে না। তাই বাজার ব্যবস্থা ঠিক করাই এখন বেশি দরকার।

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের কাঁচাবাজারে কথা হয় বিক্রেতা রাজন হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে যাদের কাছে এক কেজি সবজি বিক্রি করতাম তারা এখন আড়াইশ গ্রাম বা তিনশ গ্রাম নিচ্ছেন। প্রায় সব ধরনের সবজির দাম হু-হু করে বেড়ে গেছে। আমরা চাহিদামতো সবজি আনতেও পারি না, আবার বিক্রিও করতে পারি না।

এ সময় শাহরিয়ার শেখ নামে এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, দুটি গাজর, দুটি টমেটো ও কিছু আলু নিয়েছি। আমাকে ১১৫ টাকা দিতে হয়েছে। বাজারে এলে দিশাহারা হয়ে যাই। কোনো কিছুই কম দামে পাওয়া যাচ্ছে না।

ডিমের দাম পুনর্নির্ধারণ

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর উৎপাদক পর্যায়ে ৩৩ পয়সা বাড়িয়ে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম পুনর্নির্ধারণ করেছে, যা আজ বুধবার থেকে কার্যকর হবে। গতকাল দুপুরে ডিম উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আলীম আখতার খান নতুন এ মূল্য নির্ধারণের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সা; পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন মূল্য কার্যকরের পর ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন কিনতে খরচ হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।

ভোক্তার ডিজি আরও বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে যাতে বেশি মূল্যে ডিম বিক্রি না করা হয়, সেজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। তারপরও বেশি দামে ডিম বিক্রি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে উৎপাদনকারী, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা পর্যায় বাদে অন্যান্য স্তর বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডিম, ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সেই দামে প্রতিটি ডিম উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। বাজারে এই দামে কোথাও ডিম পাওয়া যাচ্ছে না।

রাজধানীর বাজারগুলোতে ফার্মের মুরগির লাল ডিম ১৭৫ থেকে ১৮০ ও সাদা ডিম ডজনপ্রতি ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সয়াবিন ও পাম তেলের শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাব

ভোজ্য তেলে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক ১৫% থেকে ৫% কমিয়ে ১০% নির্ধারণ এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত সকল মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গতকাল দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাব করা হয়।

সর্বশেষ চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল সয়াবিন তেল ও পাম তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছিল। বিশ্ববাজারে গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের মূল্য ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং আরবিডি পাম তেলের মূল্য ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি না করে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক ১৫% থেকে হ্রাস ১০% নামিয়ে আনা এবং স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে সকল ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়।

এ ধরনের শুল্ক অব্যাহতির ফলে ভোজ্য তেলের বিদ্যমান মূল্য বহাল থাকবে বলে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে। এর আগে তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মূল্য সমন্বয়ের আবেদন করে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে প্রস্তাব/সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে এনবিআর করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: