১১ জুলাই ২০১৬ সোমবার, ০১:২৪ এএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
দেশে এক বছরের মধ্যে চিনির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। রাজধানীর বাজারে যে চিনি গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা কেজিতে নেমেছিল, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা দরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে দর বেড়ে যাওয়ায়।
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে বিশ্ববাজারে প্রতি টন চিনির দাম ছিল ৩১০ ডলার। জুন মাসে তা ৪৩০ ডলারে উঠেছে। বিশ্বব্যাপী চিনির দাম বৃদ্ধির কারণ সরবরাহে ঘাটতি।
আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির মতো বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সয়াবিন ও পাম তেল, ভুট্টা ও চায়ের বাজার। খাদ্যপণ্যের বাইরে জ্বালানি তেলের দামও বাড়ছে। পোলট্রি ও মাছের খাবার তৈরির অন্যতম উপাদান সয়ামিলের বাজার লাগামহীন। বাড়ছে সোনার দামও।
৫ জুলাই বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দামের সর্বশেষ একটি তুলনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, জুন মাসে জ্বালানির দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে গড়ে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) খাদ্য মূল্যসূচক অনুযায়ী, জুন মাসে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। গত চার বছরের মধ্যে এক মাসে এটাই সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হার। এফএও বলেছে, এ নিয়ে পাঁচ মাস ধরে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ল।
তবে আটা, ময়দা ও গুঁড়া দুধের দাম নিয়ে চিন্তা নেই। কারণ, বিশ্ববাজারে গম ও গুঁড়া দুধের দাম কমছে। অন্যদিকে ডালের দামও কমতে পারে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া দাম থাকায় এ বছর ডালের আবাদ বেশি হয়েছে।
২০১১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করে। গত চার বছর ছিল সুসময়। এ সময়ে বিশ্ববাজারের মতো দেশের বাজারেও চিনি, ভোজ্যতেল, আটা, ময়দা, চা ও গুঁড়া দুধের দাম কমেছে। বাংলাদেশ চাল ছাড়া বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীল।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের শেষ প্রান্তিকে, অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ছিল টনপ্রতি ৭৪৩ ডলার। জুন মাসে তা বেড়ে ৭৯৮ ডলার হয়েছে। অবশ্য দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়েনি। বাজারে এখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দাম ছিল টনপ্রতি ৫৭০ ডলার। এপ্রিল মাসে তা ৭২২ ডলারে উঠেছিল। জুনে তা টনপ্রতি ৬৮৩ ডলারে নামলেও দাম আগের পর্যায়ে যায়নি। দেশের বাজারে পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকা লিটার দরে। এ দামেও তেমন কোনো হেরফের নেই।
এ বছরের শুরুতে চায়ের দাম বেশ কমে গিয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কলকাতায় নিলামে প্রতি কেজি চায়ের দাম নেমেছিল ১ দশমিক ৮৯ ডলারে। তা জুন মাসে ২ দশমিক ৫৪ ডলারে উঠেছে। চায়ের বৈশ্বিক গড় দাম ২ দশমিক ৩৬ ডলার থেকে বেড়ে জুনে ২ দশমিক ৫৮ ডলারে উঠেছে।
গত বছর আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেশ কমে গিয়েছিল। তখন ভারত থেকে আমদানি বাড়ায় দেশেও চালের দাম কমে যায়। এখন অবশ্য চালের বাজার আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জুনে থাইল্যান্ডের চালের (৫% ভাঙা) দাম উঠেছে টনপ্রতি ৪৪১ ডলারে, যা অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ছিল ৩৬৮ ডলার।
দেশের পোলট্রি ও মাছের খাবার তৈরিতে দুটি প্রধান উপকরণ হলো ভুট্টা ও সয়ামিল। এ দুটি পণ্যের দাম বেশ কিছুটা বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে জানুয়ারি-মার্চ সময়ের তুলনায় ২০ ডলার বেড়ে জুনে ভুট্টার দাম উঠেছে টনপ্রতি ১৮০ ডলারে। অন্যদিকে একই সময়ে সয়ামিলের দাম টনপ্রতি ৩২৮ ডলার থেকে বেড়ে ৪৬৭ ডলার হয়েছে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সবচেয়ে কম দাম ছিল গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে। ওই সময় প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় দাম নেমেছিল ৩২ দশমিক ৭ ডলারে। জুনে তা বেড়ে ৪৭ দশমিক ৭ ডলারে উঠেছে। অন্যদিকে জানুয়ারি-মার্চ সময়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ১ হাজার ১৮১ ডলার, যা জুনে ১ হাজার ২৭৬ ডলারে উঠেছে। দেশের বাজারেও কয়েক দফা বেড়েছে সোনার দাম।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।