facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৬ অক্টোবর বুধবার, ২০২৪

Walton

পদ্মা সেতুর এ্যাপ্রোজ সড়ক থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত যেন মরণ ফাঁদ!


১৬ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার, ১১:০৩  এএম

এম.এ ওয়াদুদ মিয়া, শরীয়তপুর

শেয়ার বিজনেস24.কম


পদ্মা সেতুর এ্যাপ্রোজ সড়ক থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত যেন মরণ ফাঁদ!

দীর্ঘ চার বছর উত্তীর্ণ হলেও পদ্মা সেতু থেকে শরীয়তপুরগামী এ্যাপ্রোজ সড়কের সম্প্রোসারণ এবং সংস্কার কাজ এখনও শেষ হয়নি। কাজটি চলছে অতি ধীরগতিতে। ফলে যানবাহন চলাচল এবং যাত্রীদের বেড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ।

প্রকল্পের এই ৪ বছরে সড়কের কাজ হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। কাজের ধীরগতির পাশাপাশি অতি বৃষ্টির কারণে খুড়ে রাখা সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানা-খন্দোক। যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে সড়কটি এখন যেন মরণ ফাঁদ পরিণত হয়েছে।

এদিকে স্থানীয়রা বলছে, সড়ক ও জনপদ বিভাগের অদক্ষতা ও দায়িত্বে অবহেলা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খাম খেয়ালীর কারণেই প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। অপরদিকে, সড়ক ও জনপদ বিভাগ বলছে,
আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হয়েছে আরও দুই বছর আগে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সকল জেলার মানুষ পদ্মা সেতুর পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারলেও একমাত্র শরীয়তপুর জেলার মানুষের ভাগ্যে এখনো জোটেনি পদ্মা সেতুর পূর্ণ সুবিধা।

পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে শরীয়তপুরগামী এ্যাপ্রোজ সড়কে ঢুকলেই শুরু হয় দুর্ভোগ। একদিকে সরু রাস্তা, অন্যদিকে প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্টি হওয়া খানা-খন্দোক সড়কটি যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

সংস্কারের জন্য সড়ক খুঁড়ে রাখায় যানবাহন চলাচল এবং যাত্রীদের ভোগান্তির মাত্রা বেড়েছে আরও অনেক বেশি। মাত্র ২৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে লাগছে বাড়তি সময়, বেড়েছে জ্বালানী খরচ, নষ্ট হচ্ছে যানবাহনের যন্ত্রাংশ। সেই সাথে বোনাস হিসেবে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দূর দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা। দ্রুতগতিতে সড়কের কাজ শেষ করার দাবী জানিয়েছেন তারা।

পদ্মা সেতু থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত ২ লেনের ২৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের জন্য ২০২০ সালের মার্চ মাসে ১ হাজার ৬শ ৮২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। তাৎক্ষণিক ভাবে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ৩টি প্যাকেজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ২০২৪ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। আর এ পর্যন্ত সড়কের কাজ হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২৬ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তেমন লোকবল নেই। নাম মাত্র শ্রমিক আর যন্ত্রপাতি দিয়ে ঢিলেঢালা ভাবে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে চলছে ২৮ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের গাফিলতির কারণে বর্তমানে সে কাজও বন্ধ রয়েছে। আর সংস্কার কাজে ধীরগতির কারণে পুরো সড়ক জুড়েই ভাঙ্গাচুরা আর খানা-খন্দোকের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সড়কটিতে চলাচলকারী যাত্রীরা। একটু বৃষ্টি হলেই ভোগান্তি বাড়ে কয়েকগুণ। চলাচলে যাত্রীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। সৃষ্টি হয় যানজট, ঘটে দুর্ঘটনা। ২৮ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে কখনও কখনও সময় লাগে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা।

স্থানীয় রমিজ খালাসী নামে একজন বলেন, "পদ্মা সেতুর সুফল দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলার মানুষ পেলেও শরীয়তপুরের মানুষ সামান্য টুকুও পায়নি। সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করলেও কাজের কোন অগ্রগতি নেই। কাজের মান অনেক খারাপ। সংস্কার কাজের কারণে ভাঙ্গা ও খানা-খন্দোক সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙ্গা ও খানা-খন্দোক বৃষ্টির পানিতে মরণ ফাঁদ তৈরী করে রেখেছে। শহর থেকে নাওডোবা পর্যন্ত সড়কে চলাচল করলে সুস্থ্য মানুষও অসুস্থ হয়ে যায়"।

চান মিয়া মাদবর (৪৫) নামের আরেকজন বলেন, "সড়কে চলাচলের কোন উপায় নেই খানা-খন্দেকের কারণে। অসুস্থ মানুষ নিয়ে সড়কে চলাচল করলে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। সুস্থ্য মানুষ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দ্রুত সড়কটির সংস্কার কাজ সমাপ্ত করার দাবী জানাচ্ছি"।

আবুল হোসেন বেপারী (৩৫) নামে একজন বাস চালক বলেন, "গাড়ি চালাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চলে সড়কটিতে। প্রায়ই গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সরু সড়কের কারণে দুইটি গাড়ি পাশাপাশি চলাচল করতে পারে না। দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করার দাবী জানাই"।

সড়কের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে বারবার যোগাযোগ করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, "সড়ক নির্মাণ কাজে জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে মোট কাজের অগ্রগতি প্রায় ৫৫ ভাগের বেশি। যদিও ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় নেয়া। তবে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই সড়কটির কাজ শেষ হয়ে যাবে"।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: