facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর সোমবার, ২০২৪

Walton

পাপ মোচনের মাধ্যম হজ


৩১ মে ২০২৩ বুধবার, ১০:৩৬  এএম

ধর্ম ডেস্ক

শেয়ার বিজনেস24.কম


পাপ মোচনের মাধ্যম হজ

আরবি হজের অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প করা। ইসলামী শরিয়ত মতে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট কার্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমে কাবাঘর জিয়ারত করাই হজ। প্রত্যেক সম্পদশালী সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর হজ ফরজ।

আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা প্রচার করে দাও।’ সুরা হজ, আয়াত ২৭। ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করবে তার জেনে রাখা উচিত যে আল্লাহ সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নন।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭।

আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য হজ করল এবং এ হজের মধ্যে কোনো অশ্লীল কথা ও কর্মে লিপ্ত হলো না সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করে যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত। এ হাদিস দ্বারা বোঝা গেল, হজ পাপ মোচনের এক শক্তিশালী মাধ্যম। হজ কবুল হলে মানুষ সম্পূর্ণরূপে নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর এ হজের পুরস্কার হচ্ছে জান্নাত। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক ওমরাহ অন্য ওমরাহ পর্যন্ত কাফফারাস্বরূপ এবং কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয়।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত।

এ হাদিস দ্বারা বোঝা গেল, একবার ওমরাহ করার পর আর একবার ওমরাহ করলে মধ্যবর্তী গুনাহগুলো মুছে যাবে। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত। হজ কবুল হলে আল্লাহ তাকে নিঃসন্দেহে জান্নাত দান করবেন। কারণ এটাই তাঁর চূড়ান্ত প্রতিদান। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহ একসঙ্গে কর। কেননা হজ ও ওমরাহ এমনভাবে দরিদ্র ও গুনাহ দূর করে যেভাবে কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রুপার মরিচা দূর করে। কবুল হজের সওয়াব জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়।’ মিশকাত।

এ হাদিস দ্বারা বোঝা গেল, হজ-ওমরাহ একসঙ্গে করা ভালো। যার নাম কিরান। তবে ওমরাহ করার পরও হজ করা যায়। যার নাম তামাত্তু। কামারের হাপর যেভাবে আগুনের সাহায্যে লোহা ও সোনা-রুপার মরিচা দূর করে দেয় তেমনি হজ ও ওমরাহ মানুষের গুনাহ মুছে দেয়। এ জন্য রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হজের চূড়ান্ত প্রতিদান জান্নাত।’ আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর যাত্রী।

গাজী, হাজী ও ওমরাহ পালনকারী।’ নাসায়ি, আলবানি, মিশকাত। এ হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয়, যারা হজ ও ওমরাহ পালন করে তারা আল্লাহর দল বা দূত কিংবা আল্লাহর পথের যাত্রী। আবু হুরাইরা (রা.) নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘হজ ও ওমরাহকারীরা হচ্ছে আল্লাহর দাওয়াতি যাত্রী দল। অতএব তারা যদি তাঁর কাছে দোয়া করে তিনি তা কবুল করেন এবং যদি তাঁর কাছে ক্ষমা চান তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন।’ ইবনে মাজাহ, মিশকাত। মোমিন মুসলমানদের প্রাণের ভূমি মদিনা হলো শান্তির নগর। রসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ বায়হাকি।

তিনি আরও বলেন, ‘যে হজ করল কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না সে আমার প্রতি জুলুম করল।’ ইবনু হিব্বান, দারু কুতনি, দায়লামি। ফকিহদের মতে হাজির জন্য মদিনা জিয়ারত সুন্নত। আল্লামা ইউসুফ ইসলাহি আসান ফিকাহ গ্রন্থে লিখেছেন, হাজীদের জন্য রসুলের রওজা জিয়ারত ওয়াজিব। জান্নাতপ্রত্যাশী প্রত্যেক মোমিন মুসলমানের অন্তর সব সময় উন্মুখ থাকে মদিনা মুনাওয়ারা দেখার জন্য। হুজুর (সা.)-এর রওজার সবুজ গম্বুজ তো বেহেশতের একটি নিদর্শন যা দর্শনে কেবল চোখ পবিত্র হয় না, প্রশান্তিতে ভরে ওঠে মানবহৃদয়।

সবুজ গম্বুজের চারদিকে রহমতের এমন স্রোতধারা প্রবহমান যার প্রস্রবণে কার না অবগাহন করতে ইচ্ছা করে। কার না মন চায় হৃদয় উজাড় করে বাদশাহর বাদশাহ কামলিওয়ালা নবী (সা.)-কে সালাতু সালাম জানাতে! কারণ এখানেই শুয়ে আছেন আল্লাহতায়ালার প্রিয় রসুল মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)। জান্নাত নিশান রওজার জিয়ারতে রয়েছে অধিক পুণ্য ও ফজিলত। যা কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস কর্তৃক সমর্থিত ও উত্তম ইবাদত হিসেবে গণ্য। রওজার জিয়ারতের ফজিলত অপরিসীম।

আল কোরআনে রওজার জিয়ারতের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘(হে মাহবুব!) যদি তারা নিজেদের আত্মার ওপর জুলুম করে তাহলে যেন তারা আপনার দরবারে আসে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রসুল (সা.)ও যদি তাদের জন্য ক্ষমা চেয়ে সুপারিশ করে তবে তারা অবশ্যই আল্লাহকে তওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে।’ সুরা নিসা, আয়াত ৬৪।

রওজায়ে আতহার জিয়ারতে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) ওয়াজিব [আবশ্যক] হয়ে গেল।’ বায়হাকি। আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে মদিনায় উপস্থিত হয়ে আমার রওজা জিয়ারত করবে কিয়ামত দিবসে আমি তার পক্ষে সাক্ষী ও সুপারিশকারী হব।’ বায়হাকি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র হজ এবং এ উপলক্ষে রসুল (সা.)-এর রওজা জিয়ারতের তাওফিক দান করুন।

লেখক: এম এ মান্নান, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: