facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর রবিবার, ২০২৪

Walton

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ভাটা: বিদেশি বিও হ্রাস ১৫ শতাংশের ওপরে


২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ শনিবার, ১০:৩৭  এএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ভাটা: বিদেশি বিও হ্রাস ১৫ শতাংশের ওপরে

দেশের পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে চলমান মন্দার প্রভাব ২০২৩ সালেও গভীরভাবে অনুভূত হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খোলার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। চলতি বছরে এই হ্রাসের হার ছিল ৫.২৭ শতাংশ।

তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যা। চলতি বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যা ১৫.৪৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধাক্কা।

করোনার পর থেকে টানা মন্দার ঘূর্ণি

২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাব পুঁজিবাজারে পতনমুখী প্রবণতা তৈরি করে। এরপর ২০২১ সালের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজারে আরও মন্দাভাব দেখা দেয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এই পরিস্থিতিকে আরও গভীর করেছে। ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত পুঁজিবাজার এই মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।

বিও হিসাব হ্রাসের বিস্তারিত চিত্র

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারিতে বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪০টি। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ৮৮০টিতে। এ হিসেবে বছরে বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ৯২,৫৬০টি বা ৫.২৭ শতাংশ।

স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তুলনামূলক পরিস্থিতি:

  • স্থানীয় বিনিয়োগকারী:

    • ১ জানুয়ারি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১ হাজার ১৫৫টি। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা কমে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ১৩৬টিতে দাঁড়িয়েছে। হ্রাসের হার ৪.৯৪ শতাংশ।
  • বিদেশি বিনিয়োগকারী:

    • ১ জানুয়ারি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার ২৮৫টি। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৭৪৪টিতে। হ্রাসের পরিমাণ ৮,৫৪১টি বা ১৫.৪৪ শতাংশ।

নারী ও পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হ্রাস

পুরুষ ও নারী উভয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব হ্রাস পেয়েছে।

  • পুরুষ বিনিয়োগকারী: ৫.০২ শতাংশ হ্রাস। ১ জানুয়ারিতে মোট সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৫৩টি, যা ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৬০ হাজার ২৮৮টিতে।
  • নারী বিনিয়োগকারী: ৬.০৩ শতাংশ হ্রাস। জানুয়ারিতে সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৭টি, যা ডিসেম্বরে কমে হয়েছে ৪ লাখ ৩ হাজার ৫৯২টি।

যৌথ বিনিয়োগকারীদের অবস্থান

যৌথ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যাও কমেছে। ১ জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৮২টি, যা ডিসেম্বরে কমে হয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫১৪টি। হ্রাসের হার ৯.৩৪ শতাংশ।

নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবেও হ্রাস

চলতি বছরের শুরুতে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাব ছিল ৭২ হাজার ৩৬১টি। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা কমে ৬৬ হাজার ৬৮৯টিতে দাঁড়িয়েছে, যা ৭.৮৪ শতাংশ হ্রাস নির্দেশ করে।

বিএসইসির উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ

বাজারের মন্দাভাব কাটাতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এসব উদ্যোগ এখনো কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করা না গেলে বাজারের এই মন্দাভাব আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।

আগের বছরের চিত্র:

২০২৩ সালের ১ জানুয়ারিতে বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৯টি। বছরের শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছিল ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১২৩টিতে। সে হিসেবে হ্রাসের পরিমাণ ছিল ৯১,২০৬টি বা ৪.৯৪ শতাংশ।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হ্রাসের হার ছিল ১২.৩৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের শুরুতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ৬৩ হাজার ২৩৪টি, যা ডিসেম্বরে ৬২ হাজার ৯৮৯টিতে দাঁড়ায়।

ভবিষ্যৎ শঙ্কা

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান বৈশ্বিক সংকট এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও বড় ক্ষতি হতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: