facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০২ এপ্রিল বুধবার, ২০২৫

Walton

বন্ধ হওয়া ব্যাংক থেকে শীর্ষস্থানীয় ইস্টার্ন ব্যাংকের উত্তরণ


৩১ মার্চ ২০২৫ সোমবার, ০৮:৫৯  এএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


বন্ধ হওয়া ব্যাংক থেকে শীর্ষস্থানীয় ইস্টার্ন ব্যাংকের উত্তরণ

বহুজাতিক ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিসিসিআই) ১৯৯২ সালে বন্ধ হয়ে গেলে, বাংলাদেশ সরকার এটিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয় এবং গঠন করা হয় ইস্টার্ন ব্যাংক। এই সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে বিসিসিআইয়ের আমানতকারীরা ইস্টার্ন ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারে পরিণত হন। প্রথমদিকে সরকারের মালিকানায় থাকা ৬০ শতাংশ শেয়ার পরবর্তীতে বেসরকারি খাতে চলে যায়।

শক্তিশালী নেতৃত্ব ও উত্তরণের পথ

সুশাসন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং চর্চার সমন্বয়ে ইস্টার্ন ব্যাংক দ্রুতই দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের একটি হয়ে ওঠে। গত ২০ বছর ধরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকটি প্রায় ১,৬০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করে।

২০০৭ সাল থেকে আলী রেজা ইফতেখার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমরা বিদেশি ও দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং পরিচালন কাঠামোতে স্বচ্ছতা বজায় রেখেছি। ব্যাংকের প্রতিটি নীতিমালা লিখিত আকারে রয়েছে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহজ ও নিরপেক্ষ করেছে।’

বিসিসিআই থেকে ইস্টার্ন ব্যাংকের যাত্রা

বিসিসিআই ১৯৭২ সালে পাকিস্তানি ব্যাংকার আগা হাসান আবেদি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ব্যাংকটি বিশ্বব্যাপী বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯২ সালে জাতীয় সংসদে ইস্টার্ন ব্যাংক পুনর্গঠন স্কিম পাস করে, যার ফলে আমানতকারীদের শেয়ারের মাধ্যমে মালিকানা দেওয়া হয়।

ব্যাংকের প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৬৫ কোটি টাকা ঘাটতি থাকলেও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঋণ আদায় ও কার্যকর নীতির কারণে এটি ছয় বছরের মধ্যে মুনাফায় ফিরে আসে।

ইস্টার্ন ব্যাংকের নতুন রূপান্তর

২০০০ সালে ব্যাংকের পরিচালনা কাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে এটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে ব্যাংকটি আধুনিক ব্যাংকিং মডেল গ্রহণ করে।

কাজী মাহমুদ সাত্তার এমডি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংকের কেন্দ্রীভূত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করেন। ২০০২ সালে ইস্টার্ন ব্যাংক কোর ব্যাংকিং সলিউশন (সিবিএস) বাস্তবায়ন করে, যা দেশে প্রথম। এতে অনিয়ম-জালিয়াতি কমে আসে ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়।

আর্থিক অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

২০০০ সালে ব্যাংকের আমানত ছিল ১,২৩৮ কোটি টাকা এবং ঋণ ছিল ৮১৪ কোটি টাকা, যা ২০০৫ সালে বেড়ে যথাক্রমে ১,৯৪০ কোটি ও ১,৭৭৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। বর্তমানে ব্যাংকের শাখা সংখ্যা ৮৫টি এবং উপশাখা ৪৫টি, যা প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশব্যাপী ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে।

ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরী বলেন, ‘সুশাসন, স্বচ্ছ নীতি এবং পরিচালনার স্বাধীনতা বজায় রাখার কারণে ইস্টার্ন ব্যাংক আজকের অবস্থানে এসেছে।’

পুনর্গঠনের মডেল: সংকটে থাকা ব্যাংকের জন্য উদাহরণ

বর্তমানে কিছু ব্যাংক সংকটে পড়লেও, ইস্টার্ন ব্যাংকের পুনর্গঠনের কৌশল অনুসরণ করে সেগুলোরও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘ইস্টার্ন ব্যাংক পুনর্গঠনের সফলতার মডেল ব্যবহার করে এখনকার সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোর জন্য ৫-১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা যেতে পারে।’

ইস্টার্ন ব্যাংকের এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, সুশাসন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সঠিক কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে একটি বন্ধ ব্যাংকও দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: