০২ এপ্রিল ২০২৩ রবিবার, ১২:৩৩ পিএম
স্টাফ রিপোর্টার
শেয়ার বিজনেস24.কম
২০১৫ সাল থেকে মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে রোজাদারদের বিনামূল্যে সেহরি খাওয়াচ্ছেন নূর নাহার বেগম নামের এক নারী। এই আট বছর ধরে রমজান মাসের প্রতিদিন দুশো থেকে আড়াইশো জন রোগী ও স্বজনদের সেহরি করান তিনি। কিন্তু কেন?
জানা গেছে, একমাত্র মৃত ছেলের আত্মার শান্তি কামনায় রমজানের প্রতি রাতে মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের রোজাদার রোগীদের গত আট বছর ধরে বিনামূল্যে সেহরি খাওয়াচ্ছেন তিনি। নিজ খরচে সেহরি করান ওই নারী। নূর নাহার মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল পাড়ার নুরুল ইসলামের স্ত্রী।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই দুর্ঘটনায় সন্তান নাহিদুজ্জামানকে হারান নূর নাহার। সন্তানের টুকরো টুকরো স্মৃতি বুকে নিয়েই নিজেকে নিয়োজিত করেছেন এক মহৎ কাজের সঙ্গে। উদ্দেশ্য একমাত্র সন্তানের আত্মার শান্তি কামনা। বিগত আটটি বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমী এই ‘মা’ তার ছোট্ট একটি ব্যবসা থেকে সারা বছর তিল তিল করে জমানো টাকার প্রায় সবটাই খরচ করে যাচ্ছেন মানবসেবায় এই পবিত্র রমজান মাসে।
রাত ১০টা থেকে সেহরির রান্নাবান্নার জন্য জোগাড় করতে থাকেন। হাসপাতাল গেটের ঠিক পাশেই প্রতিবেশী ভাইয়ের একটি হোটেলে নিজ হাতে রান্নার আয়োজন করেন তিনি। সঙ্গে সহযোগিতা করেন তিন থেকে চারজন কাছের মানুষ। নিঃস্বার্থে বিনা পারিশ্রমিকে তারা সহযোগীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন নিজ নিজ কাজে, কেউ রান্নার কাজে, কেউ খাবার বিলি করতে আবার কেউ সেহেরির আগ মুহূর্তে হাসপাতালে ঢুকে রোগীর স্বজনদের ডাকেন।
পরে খাবার নিয়ে বসেন হাসপাতাল গেটে তার ছোট্ট একটি ওষুধের দোকান নাহার ফার্মেসির সামনে। অপেক্ষা করতে থাকেন নিজ হাতে তৈরি খাবার বিলিয়ে দেয়ার জন্য। রাত ২টার পর থেকেই মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দূর গ্রামের রোগী ও তাদের স্বজনরা থালাবাটি নিয়ে হাসপাতাল গেটের বাইরে চলে আসেন নূর নাহারের দেয়া সেহরির খাবার নিতে। হাসপাতালের পাশের অনেক দুস্থ পরিবারও আসে সেখানে সেহরি নিতে। কেউ সেখানে বসে নূর নাহারের দেয়া সেহরি খান, কেউ খান হাসপাতালের ভেতরে।
হাসপাতালে থাকা রোগীর স্বজনরা বলেন, নাহার আপার কারণে আমাদের সেহরির খাবার নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। এটি অনেক বড় সওয়াবের কাজ। আশপাশে ভালো তেমন কোনো হোটেল নেই; থাকলেও খাবারের দাম অনেক বেশি। কিন্তু একদম বিনামূল্যে নাহার আপার এই খাবার খেয়ে আমরা রোজা রাখতে পারি। আমরা দোয়া করি, তার নেক হায়াতের জন্য, তার মহৎ উদ্দেশ্য যেন সফল হয়।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.হাসিবুস সাত্তার বলেন, আমি এখানে যোগদান করার পরে বিস্মিত হয়েছি; নাহার নামে এক নারী আমার হাসপাতালের রোগীসহ তাদের স্বজনদের প্রতিবছর এই রমজান মাসে ভোররাতে সেহরির ব্যবস্থা করে আসছেন। বর্তমান যুগে এমন মানুষ পাওয়া সত্যিই দুর্লভ।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।