০৯ মার্চ ২০২৫ রবিবার, ১০:৩৭ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
![]() |
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম শেয়ারবাজারে চলমান অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক দূর করতে একাধিক জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে অনিয়মের বিরুদ্ধে যে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে, আমরা সেটিকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করি।"
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকালে বিএসইসি ভবনে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে মমিনুল ইসলাম বলেন, "বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। চলমান পরিস্থিতি দ্রুত সমাধানের দিকে যাচ্ছে।" তিনি বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করার ঘটনাকে ‘একেবারে অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেন এবং এ ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জানান।
ডিএসই চেয়ারম্যান বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিএসইসির সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, "আমরা বিএসইসিকে বলেছি, পরিস্থিতি শক্ত হাতে সামাল দিতে হবে। কোনো হুমকি বা চাপের মুখে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না।" এছাড়াও তিনি অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
বৈঠকে ডিএসই, চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিলার ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) সহ অন্যান্য শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৪২টি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে, সিকদার পরিবারের সদস্যরা নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে জনগণের আমানতের টাকা লুটপাট করেছেন এবং মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত রয়েছেন। এ কারণে তাদের শেয়ার বিক্রি ও স্থানান্তর ঠেকাতে এসব অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার সংশ্লিষ্টদের ১০২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ৯৫৭ বিঘা জমি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও তার পরিবারের নামে থাকা শেয়ার এবং সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করা হচ্ছিল। ফলে এসব সম্পদ রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বাজেয়াপ্ত করা জরুরি হয়ে পড়ে। এর আগে, তার ৩৯টি ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করা হয়, যেখানে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা জমা রয়েছে।
সপ্তাহের প্রথম দিন, রোববার (৯ মার্চ), শেয়ারবাজারে দুটি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। প্রথমত, বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেছেন যে, বিএসইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করে অফিস করানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বাজারে পতনের মধ্যেও কোনো কোম্পানির শেয়ার বিক্রেতার সংকটে পড়ে ‘হল্টেড’ হয়নি, যা খুবই বিরল ঘটনা।
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান ও তার পরিবারের নামে থাকা ১৯১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত এ আদেশ দেন। দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে যে, এসব অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের চেষ্টা চলছিল। এর ফলে, ৪১ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বেশি উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, "যদি কেউ মনে করেন, কোনো সিদ্ধান্ত তার বিরুদ্ধে গেছে, তবে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তবে উগ্র আচরণ ও বিশৃঙ্খলা কোনো সমাধান নয়।" বিএসইসি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় একসঙ্গে কাজ করছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।