০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ রবিবার, ০৯:৩৫ এএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক ‘আন্তর্জাতিক ঋণ প্রতিবেদন ২০২৪’ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বৈদেশিক ঋণের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বড় ধরনের চাপে পড়ছে। সুদহার বৃদ্ধি ও গ্রেস পিরিয়ড কমে আসায় ঋণ পরিশোধের বোঝা দিন দিন ভারী হচ্ছে।
নতুন ঋণ ছাড়ের হার কমে যাওয়ায় এবং আগের ঋণ পরিশোধে বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় হওয়ায় দেশে নিট ঋণের প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এই চাপ পরবর্তী সরকারকেও বহন করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৪৫ কোটি ডলার, যা ২০১০ সালের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সুদ পরিশোধের পরিমাণও লাফিয়ে বেড়েছে।
এই প্রবৃদ্ধির মূল কারণ ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি। আগে যেখানে সুদহার দেড় শতাংশ ছিল, এখন তা বেড়ে ৩ শতাংশ-এ পৌঁছেছে। এছাড়া, ঋণের গ্রেস পিরিয়ড কমে ৮ বছর থেকে ৬ বছরে নেমেছে এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বেড়ে ২৫ বছর থেকে ২৮ বছরে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে নেওয়া, যা মোট ঋণের ২৬ শতাংশ। এই ঋণ কম সুদে ও দীর্ঘ মেয়াদের হয়।
মোট ঋণের ৫৪ শতাংশ বহুপাক্ষিক, ৩৭ শতাংশ দ্বিপাক্ষিক এবং ৯ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে নেওয়া।
২০১০ সালে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। কিন্তু ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭২ কোটি ১০ লাখ ডলার। স্বল্পমেয়াদি ঋণের সুদ পরিশোধও বেড়েছে ২৪ শতাংশ। ফলে সামগ্রিকভাবে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৯০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে সুসংবাদও রয়েছে। মোট ঋণের ৫৪ শতাংশ কম সুদের ও দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় ঝুঁকির মাত্রা তুলনামূলক কম। বর্তমানে জিএনআইয়ের বিপরীতে বৈদেশিক ঋণের হার ২২ শতাংশ। এই হার ৫০ শতাংশের বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। ঋণ পরিশোধের হারও জিএনআইয়ের মাত্র ২ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়ানো ও বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার ঋণ পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ঋণের সুদ পরিশোধের হার দ্রুত বেড়েছে।
তবে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের ঝুঁকি কম হলেও ঋণের সুদের হার ও পরিশোধের চাপ ক্রমশ বাড়ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ঋণ ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা আরও শক্তিশালী করতে হবে। নতুন ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে এবং আগের ঋণের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে বৈদেশিক ঋণের চাপ হ্রাসে কার্যকর পরিকল্পনা না নিলে পরবর্তী সরকারকেও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের সতর্কবার্তা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।