৩১ মার্চ ২০২৫ সোমবার, ০৪:০১ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ও অভিজাত মসলার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে জাফরান। একে ‘লাল সোনা’ বলা হয়, কারণ এর দাম অন্যান্য মসলার তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু কীভাবে জাফরান এত মূল্যবান হয়ে উঠল? এর ইতিহাস, চাষাবাদ প্রক্রিয়া এবং বৈশ্বিক বাজার নিয়ে জানুন বিস্তারিত।
প্রাচীনকালে মসলা সংগ্রহের কৌশল রূপকথার গল্পের মতোই শোনায়। দারুচিনির প্রসঙ্গ ধরলে, এক সময় বলা হতো, সিনামোলগ নামে এক কাল্পনিক পাখি দারুচিনি সংগ্রহ করত, যা মূলত আরব বণিকদের সৃষ্ট গল্প। এসব কৌশল ইউরোপীয় বণিকদের মসলার উৎস সম্পর্কে বিভ্রান্ত করতে ব্যবহৃত হতো।
তবে মসলা বাজারে যুগ যুগ ধরে একটি জিনিস অপরিবর্তিত থেকেছে—জাফরানের আভিজাত্য। হাজার বছরের ইতিহাস পেরিয়েও এটি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে দামী মসলা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ফুড অ্যান্ড ওয়াইন’ সাময়িকীর তথ্যানুসারে, ব্রোঞ্জ যুগের মিনোয়ান সভ্যতায় (প্রায় ১৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) জাফরানের প্রথম ব্যবহার শুরু হয়। সান্তোরিনি দ্বীপের প্রাচীন চিত্রকর্মেও জাফরান চাষের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি ৫০ হাজার বছর আগে ইরাকের গুহাচিত্রেও জাফরানের রং ব্যবহারের নিদর্শন রয়েছে।
রোমান সাম্রাজ্যে স্নানের জন্য, মিসরীয় রানী ক্লিওপেট্রার রূপচর্চায় এবং মধ্যযুগীয় সন্ন্যাসীদের লেখার কাজে জাফরানের ব্যবহার দেখা গেছে।
জাফরানের দাম এত বেশি হওয়ার পেছনে মূল কারণ এর উৎপাদন প্রক্রিয়া। এটি তৈরি হয় ক্রোকাস ফুলের গর্ভমুণ্ড থেকে, যা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সংগ্রহ করতে হয়। ইরানের সরকারি তথ্য অনুসারে, এক কেজি জাফরান তৈরি করতে প্রায় দেড় লাখ ফুলের গর্ভমুণ্ড সংগ্রহ করা লাগে, যা করতে প্রয়োজন হয় ৩৭০-৪৭০ ঘণ্টা পরিশ্রম।
এক পাউন্ড (৪৫৩ গ্রাম) জাফরানের দাম ১০,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। দক্ষ শ্রমিকদের হাতে এটি সংগ্রহ করতে হয়, যা এটিকে অন্যান্য মসলার তুলনায় ব্যয়বহুল করে তুলেছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৯০% জাফরান উৎপন্ন হয় ইরানে। এর বাইরে ভারতের কাশ্মীর এবং আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশেও জাফরান উৎপাদিত হয়।
উচ্চমানের জাফরানের রং উজ্জ্বল লাল এবং এতে সামান্য কমলা-লাল দাগ থাকে। এতে তীব্র সুগন্ধ থাকে এবং এটি পানিতে মেশালে সোনালি রঙ ধারণ করে। নিম্নমানের জাফরান হালকা লাল বা বাদামি বর্ণের হতে পারে এবং গন্ধেও কম তীব্র হয়।
বাংলাদেশে মূলত ইরান থেকে আসা জাফরানই বেশি জনপ্রিয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, এক গ্রাম জাফরানের দাম মানভেদে ২৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সরাসরি আমদানি না হলেও, এটি প্রবাসীদের মাধ্যমে দেশে আসে।
জাফরান শুধু রান্নার উপাদান নয়, এটি ঔষধি গুণের জন্যও বিখ্যাত। এটি বিষণ্নতা কমাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে, হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে এবং ত্বকের যত্নে সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলাই ভালো।
হাজার বছরের ইতিহাস, কঠিন উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ঔষধি গুণাবলির কারণে জাফরান এখনো বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলা। এর আকাশছোঁয়া মূল্য এবং বিলাসবহুল ব্যবহার একে সত্যিকার অর্থেই ‘লাল সোনা’তে পরিণত করেছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।