facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার, ২০২৫

Walton

বেক্সিমকোর ঋণ সংকট: বিশদ বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়


৩১ জানুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার, ১১:০২  এএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


বেক্সিমকোর ঋণ সংকট: বিশদ বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়

দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপ বর্তমানে ব্যাপক ঋণ সংকটের মুখে পড়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তাদের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণ পরিশোধ এবং শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের লক্ষ্যে গ্রুপের উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা আইনি ও বাজারগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।


ঋণের বিশ্লেষণ: কীভাবে এত বড় অঙ্ক জমা হলো?

বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ সংকট রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, কয়েকটি মূল কারণ এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী—

বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণ: বেক্সিমকো বিভিন্ন সময় সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে এ ঋণের যথাযথ ব্যবহার হয়েছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে তহবিল ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

  1. অধিক মাত্রায় ব্যবসা সম্প্রসারণ: বিভিন্ন খাতে বড় আকারে বিনিয়োগ করায় তহবিলের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
  2. অর্থনৈতিক মন্দা ও বাজারে ধীরগতি: সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আর্থিক খাত চাপে রয়েছে, যার ফলে বেক্সিমকোর মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কমে গেছে, কিন্তু তাদের দায়বদ্ধতা বেড়েছে।
  3. অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম: বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে ভুল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত ও করপোরেট গভর্ন্যান্সজনিত দুর্বলতা দেখা গেছে।

শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত ও আইনি জটিলতা

বেক্সিমকোর উদ্যোক্তাদের হাতে থাকা তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার মূল্য প্রায় ৪,৫৩৭ কোটি টাকা। এটি যদি বাজারে বিক্রি করা হয়, তবে প্রতিষ্ঠানটি কিছুটা আর্থিক স্বস্তি পেতে পারে। তবে এতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে—

  1. আইনি সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (BSEC) নিয়ম অনুযায়ী, উদ্যোক্তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ শেয়ার সংরক্ষণ করতে হয়। ফলে তারা হুট করে সব শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না।
  2. শেয়ারবাজারের প্রভাব: এত বড় অঙ্কের শেয়ার বাজারে ছেড়ে দিলে শেয়ারবাজারে ধস নামতে পারে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
  3. শেয়ার বিক্রি করলেই ঋণ পরিশোধ সম্ভব নয়: ৭০ হাজার কোটি টাকার ঋণের তুলনায় ৪,৫৩৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি যথেষ্ট নয়। ফলে অন্যান্য বিকল্প পথ খোঁজা প্রয়োজন।

শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের চ্যালেঞ্জ

বেক্সিমকোর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বহুদিন ধরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। ফলে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও ধর্মঘট করেছে, যা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সরকারের নির্দেশে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা খুঁজছে।

সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে?

  1. কঠোর আর্থিক তদারকি ও অডিট: সরকারের উচিত ফরেনসিক অডিটের মাধ্যমে যাচাই করা, আদৌ কীভাবে এই বিপুল ঋণ জমা হলো এবং কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে।
  2. ধাপে ধাপে শেয়ার বিক্রি: একবারে বিপুল শেয়ার বিক্রির পরিবর্তে ধাপে ধাপে বিক্রি করা হলে বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কম পড়বে।
  3. সরকারি তদারকিতে ঋণ পুনর্গঠন: বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা তৈরি করতে পারে, যাতে বেক্সিমকোর মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারে এবং ধাপে ধাপে ঋণ পরিশোধ করতে পারে।
  4. কৌশলগত অংশীদার খোঁজা: আন্তর্জাতিক বা দেশীয় শক্তিশালী কোম্পানির সাথে যৌথ বিনিয়োগ (joint venture) এর মাধ্যমে নতুন মূলধন আনার চেষ্টা করা যেতে পারে।

বেক্সিমকোর ঋণ সংকট শুধুমাত্র একটি কোম্পানির সমস্যা নয়, এটি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ভুল সিদ্ধান্ত নিলে এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। তাই সরকারের উচিত দ্রুত স্বচ্ছ তদন্ত, শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করা এবং কোম্পানির পুনর্গঠনের পরিকল্পনা তৈরি করা

এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান কীভাবে আসবে, তা সময়ই বলে দেবে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: