০৭ আগস্ট ২০১৫ শুক্রবার, ০৮:৫১ পিএম
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এখন ৫৭ শতাংশ, লোকসান ১১০ কোটি টাকা এবং মূলধন ঘাটতি প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। ২০০৯ সালের পর প্রায় পাঁচ বছর ধরে লুটপাটের ঘটনায় দেশের একসময়ের অন্যতম ভালো ব্যাংকের এই পরিণতি হয়েছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো পর পর দুই বছর লোকসান দিল ব্যাংকটি। খেলাপি ঋণের হার এবং মূলধন ঘাটতিও ব্যাংকটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালের ৬ জুলাই আগের পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের পর সরকার নতুন একটি পর্ষদ নিয়োগ দিয়েছিল। সেই পর্ষদ ওই বছরই একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছিল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৪ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। বেসিক ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৪০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে এই খেলাপি ঋণের হার আরও বেড়ে হয়েছে ৫৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আবার ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে এই ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এরপর মূলধন ঘাটতি আরও বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংক সরকারের কাছে এক হাজার ৩৭২ কোটি টাকা চেয়েছিল। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় বেসিক ব্যাংককে সরকার এখন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মূলধন দেবে। ১৯৮৯ সালের ২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড বা বেসিক ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরে ব্যাংকটির নিট মুনাফা (কর দেওয়ার পর) ছিল ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এরপর থেকে ব্যাংকটির মুনাফা কেবলই বেড়েছে। ২০০০ সালে বেসিক ব্যাংক মুনাফা করে ১৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগ দেওয়া নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেয়, তখন ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ৬৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। বহুল আলোচিত শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে সে সময় পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় ব্যাংকটির পতন। এর ফলে ২০১৩ সালে বেসিক ব্যাংক প্রথমবারের মতো লোকসান করে। ওই সময় ব্যাংকটির লোকসান ছিল ৫৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা, আর ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে সেই লোকসান দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তারা ২০০৪ সালের শেষের দিকে ব্যাংকটির সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেই প্রতিবেদনে ব্যাংকটির নানা সংকটের তথ্য রয়েছে। যেমন, আগের পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজনীয় নিয়ম-নীতি না মেনেই নতুন গ্রাহকদের বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছে। ব্যাংকটিতে বৃহৎ ঋণের অংশ ৬৮ শতাংশ, অথচ নিয়ম হচ্ছে তা হতে হবে ৪০ শতাংশ। ক্ষুদ্র ও মধ্যম শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৪৪ শতাংশ, অথচ দেওয়ার কথা ৫০ শতাংশ। ব্যাংকের ৬৮ শাখার ৩৪টিই লোকসানি। ব্যাংকটির মোট লোকবল ২ হাজার ২৪৯ জন, যার ৭০০ জনই অতিরিক্ত। আর ব্যাংকটির ১৮টি ভালো গ্রাহক বিরক্ত হয়ে ব্যাংক ছেড়ে চলে গেছে। ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের পর থেকে ব্যাংকটিতে এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। আর এই আত্মসাতে মূল ভূমিকা ছিল ব্যাংকটির সেই সময়ের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর। এ জন্য পরিচালনা পর্ষদ বদল করা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করলেও আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হচ্ছে না।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।