২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার, ১১:২৩ এএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
![]() |
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭.২ শতাংশ এবং অর্থছাড় কমেছে ১০.৪ শতাংশ। তবে এই সময়ে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৩০.৩ শতাংশ, যা প্রায় ২.৪১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি হ্রাস
ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ২.৩৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭.১৭ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছে ৩.৯৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৪.৩৯৮ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বৃদ্ধি
গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের ১.৮৫৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল, যা চলতি অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ২.৪১৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে মূল ঋণ পরিশোধ ১.০৯ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১.৫৪৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং সুদ পরিশোধ ১৬০.৭ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৮৭৪ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ঋণের প্রতিশ্রুতি কমার কারণ
ইআরডি জানিয়েছে, মধ্যমেয়াদি ঋণ কৌশলের আওতায় সরকার বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে উন্নয়ন সহযোগীরা আগের তুলনায় বেশি ঋণ দিতে চাইলেও সরকারের ঋণ গ্রহণের আগ্রহ কমেছে। বর্তমানে শুধুমাত্র জরুরি বাজেট সহায়তা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ঋণ গ্রহণ করা হচ্ছে, যার ফলে নতুন ঋণ চুক্তির হার কমে গেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি
সরকারি অর্থায়নের পাশাপাশি বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমে গেছে। অনেক প্রকল্পের ঠিকাদার চলে যাওয়া, প্রকল্প পরিচালকের পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হওয়ায় বৈদেশিক অর্থছাড় কমে গেছে।
বৈদেশিক ঋণ প্রদানকারী সংস্থার ভূমিকা
অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বিশ্বব্যাংক সর্বোচ্চ ৯৪৪.৫ মিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করেছে, যার মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে, যার মধ্যে ৬০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা। এছাড়া, জাপান ২৫২.১২ মিলিয়ন, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ১৬০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অর্থছাড়ের দিক থেকে এডিবি ১.০৯ বিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাংক ৮৬৭.৬৪ মিলিয়ন ডলার, জাপান ৬৯৬.৩২ মিলিয়ন, রাশিয়া ৫৩৬.৮৭ মিলিয়ন, চীন ২৬৭.৮১ মিলিয়ন এবং ভারত ৮০.১৪ মিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করেছে।
সরকারের ঋণ কৌশলের ফলে বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ কমলেও ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং বৈদেশিক অর্থায়নের ওপর নির্ভরতা কমানোর এই নীতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।