১৩ জানুয়ারি ২০২৫ সোমবার, ০২:১০ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
বিএবির চাঁদা তোলার পুরনো কৌশল আবারও সচল
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) পুনরায় ব্যাংকগুলো থেকে চাঁদা তুলতে শুরু করেছে, যা ব্যাংক খাতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি, সংগঠনটি প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণভান্ডারে কম্বল দানের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দাবি করে ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথনের জন্য ৪ কোটি টাকা অনুদান নির্ধারণ করে চাঁদা চাওয়া হয়েছে।
বিএবির এমন পদক্ষেপে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা। ছয়টি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যেখানে তাঁরা বিএবির এই চাঁদা তোলার কৌশলকে আগের মতোই বলছেন। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাবেক বিএবি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এই ধরনের চাঁদা আদায়ের জন্য সমালোচিত হন।
চাঁদাবাজি নিয়ে নতুন কমিটির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
২০০৮ সাল থেকে টানা ১৭ বছর বিএবির চেয়ারম্যান ছিলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার, যিনি বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যাংকগুলো থেকে চাঁদা আদায় করতেন এবং সরকারের বিভিন্ন নীতিগত সুবিধা আদায়ের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএবির কমিটিতে পরিবর্তন আসে, তবে নতুন কমিটিও আগের ধারায় চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ব্যাংক খাতে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (সিএসআর) শূন্যের কোঠায়
বিএবির চাঁদা তোলার ফলে ব্যাংকগুলোর সিএসআর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গত ১৫ বছরে প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছি। সরকারের বদলের পরও চাঁদা তোলা অব্যাহত রয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর প্রকৃত সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে।”
চাঁদাবাজি বন্ধের আহ্বান
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বিএবির এই চাঁদাবাজি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, “বিএবির চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আইন মোতাবেক সিএসআরের অর্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব উদ্যোগে সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।”
সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, “বিএবি যদি আগের মতো গণহারে চাঁদা তোলার কাজ শুরু করে, তাহলে সেই উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে হবে। জনগণের আমানত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না।”
বিএবি কমিটির নতুন সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যদি এই চাঁদা তোলার প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে ব্যাংক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সিএসআরের অর্থ নিয়ে প্রশ্ন
গত ১০ বছরে ব্যাংকগুলো প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছে। তবে এবার ম্যারাথনের জন্য চাঁদা নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ম্যারাথনের জন্য সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছে, যা ব্যাংকের সিএসআর কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বিএবির নতুন কমিটির কার্যক্রম নিয়ে ব্যাংক খাতের অভ্যন্তরে অসন্তোষ বিরাজ করছে, যেখানে ব্যাংকগুলোর সত্যিকার সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
সূত্র : প্রথম আলো
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।