
পুষ্টি সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বিশেষ করে পুষ্টি পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গ্লোবাল নিউট্রিশন রিপোর্টে’ এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সার্বিক পুষ্টি সূচকের আরও উন্নতি করতে বাংলাদেশকে আরো কাজ করতে হবে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পুষ্টি ও ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ জানান, অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কিশোরীদের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। তবে অপুষ্টিতে শিশুমৃত্যু অনেক কমেছে এবং এতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় ভালো করেছে।
আইসিডিডিআরবির পুষ্টিবিজ্ঞানীরা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভূগছে এমন শিশুদের জন্য দুটো বিশেষ খাবার তৈরি করেছেন। এর একটি চাল ও ডাল দিয়ে তৈরি। অন্যটি ছোলা দিয়ে তৈরি। উদ্ভাবকরা জানান, কোনও জলীয় পদার্থের উপস্থিতি না থাকায় এগুলো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে না। খাবার দুটোর নাম দেয়া হয়েছে স্বর্ণালী ১ ও স্বর্ণালী ২। বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাসপাতাল ও বেসরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে এগুলো পাঠানো হবে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের মাঝে এ খাবার বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।
শিশুদের পুষ্টির বিষয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক (শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ) ডা. এস কে বণিক জানান, শিশুর সুস্থ্য-সবলভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন গর্ভবতী মায়ের সঠিক পুষ্টি। শিশুর জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে মায়ের দুধ খাওয়ানো, শিশুর বয়স ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো এবং ৬ মাস বয়সের পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশপাশি বয়স অনুযায়ী পারিবারিক পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা এবং পুষ্টি (এইচপিএন) খাতের বিদ্যমান বাধাসমূহ দূর করে এ কর্মসূচিকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পযর্ন্ত পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি (এইচপিএনএসডিপি) বাস্তবায়ন করে। এরই মধ্যে বাস্তবায়িত এইচপিএসপি (১৯৯৮-২০০৩) এবং এইচপিএনএসডিপি (২০০৩-২০১১) থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা, সরকারের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা, রূপকল্প-২০২১ এবং স্বাস্থ্যনীতির আলোকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তৃতীয় সেক্টর কর্মসূচি এইচপিএনএসডিপি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে।
এ কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উপ-খাতসমূহের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো জনগনের, বিশেষ করে নারী, শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিতদের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেবা প্রাপ্তির চাহিদা বৃদ্ধি, কার্যকর সেবা প্রাপ্তি সহজলভ্য এবং স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেবাসমূহের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস, রোগের প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যুর হার হ্রাস এবং পুষ্টিমান বৃদ্ধি করা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের মা ও শিশুদের পুষ্টিহীনতা রোধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়হীতার কারনে অপুষ্টি সম্পূর্ণ দূর করতে সরকার গৃহীত কর্মসূচীগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ কারণে পুষ্টি কার্যক্রম সফল করতে পুষ্টিনীতি ও কর্মসূচি ঢেলে সাজানো প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যাক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হালনাগাদকৃত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত চালু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যা ১৪ হাজার ৩৫৬টি। উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে ৪৩৬টি হাসপাতাল। ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে ৩১টি হাসপাতাল ও ১ হাজার ৩৬২টি আউটডোর ক্লিনিক। ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে ১২ হাজার ৫২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক। বর্তমানে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে শিশু ও নারীই বেশি।
সূত্র: বাসস
শেয়ার বিজনেস24.কম