facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৬ অক্টোবর বুধবার, ২০২৪

Walton

ভেস্তে গেলো বন্ধ কোম্পানি চালুর নামে শতাকোটি টাকা হাতানোর ছক


১৬ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার, ১১:২৫  এএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


ভেস্তে গেলো বন্ধ কোম্পানি চালুর নামে শতাকোটি টাকা হাতানোর ছক

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সময় রুগ্‌ণ কোম্পানি পুনর্গঠনের নামে নতুন কারসাজি শুরু হয়। এতে যুক্ত হন শেয়ারবাজার কারসাজিতে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরোসহ অনেকে। আল-আমিন কেমিক্যাল নামে বাজার থেকে একটি তালিকাচ্যুত রুগ্‌ণ ও বন্ধ কোম্পানিতে ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে উৎপাদন শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কারসাজির মাধ্যমে শতকোটি টাকা লুটের পরিকল্পনা করেন হিরো ও তাঁর সহযোগীরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সরেজমিন প্রতিবেদন এবং দৈনিক সমকালের এক অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে অধ্যাপক শিবলীর পদত্যাগের পর হিরোদের সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বধীন বর্তমান বিএসইসি শেয়ারবাজারে অনিয়ম অনুসন্ধানে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি যেসব ইস্যুতে অনিয়ম ও দুর্নীতি উদ্‌ঘাটনের দায়িত্ব পেয়েছে, আল-আমিন কেমিক্যাল তার অন্যতম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যবসা পুনরুদ্ধারের নামে আল-আমিন কেমিক্যালে নতুন করে ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হিরো এবং আরও কয়েকজন। কিন্তু বিনিয়োগের অর্থ থেকে ১৫ কোটি টাকাই শেয়ার ব্যবসায় লগ্নি করেন তারা। লোকসানের ভয়ে অন্য অংশীদাররা ৫ কোটি টাকা ফেরত নিলেও এখনও তাদের লগ্নি আসল সাত কোটি টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা করছেন। এ নিয়ে অংশীদারদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছে। আর এ কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ক্রিকেটার ও সাবেক এমপি সাকিব আল হাসান এবং শেয়ারবাজার কারসাজিতে আলোচিত জাবেদ এ মতিন রয়েছেন। জাবেদ এ মতিন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলীর ঘনিষ্ঠ। সম্প্রতি অধ্যাপক শিবলী, হিরো এবং জাবেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজএবং তাদের শেয়ার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

যে বন্ধ কোম্পানি চালু করার কথা, তার উৎপাদনে তথৈবচ অবস্থা। এইট পাস প্রডাকশন ম্যানেজার দিয়ে কোম্পানির রাসায়নিক পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। নেই কোনো কেমিস্ট। শ্রমিক মাত্র ৭ জন, তাও দৈনিক মজুরীভিত্তিক। সমকালের কাছে এসব তথ্য স্বীকার করেছেন কোম্পানির অংশীদার ও বর্তমান এমডি মুন্সী শফিউল্লাহ।
আল-আমিন কেমিক্যাল ঘিরে শেয়ার কারসাজির ছক বিষয়ে জানেন এমন একজন সমকালকে জানান, দুই বছর আগে এর মালিকানা নেন আবুল খায়ের হিরো, মুন্সী শফিউল্লাহসহ কয়েকজন। এদের কেউই শিল্প প্রতিষ্ঠান চালানোর লোক নন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল অধ্যাপক শিবলীর সঙ্গে সখ্য কাজে লাগিয়ে শেয়ার ব্যবসা করা। ব্যবসা পুনরুদ্ধারের নাম করে বিনিয়োগের টাকা জোগাড় করে সে টাকা শেয়ার ব্যবসায় খাটিয়ে পাওয়া মুনাফা করা এবং কোম্পানিকে লাভজনক দেখানো। এর পর শেয়ারদর বাড়িয়ে উচ্চমূল্যে বিক্রি করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।

আল-আমিন কেমিক্যাল এক সময় ডিএসইর মূল প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত ছিল। বছরের পর বছর বন্ধ থাকায় এবং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ৭০টির অধিক কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করে তৎকালীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আল-আমিন কেমিক্যাল তার অন্যতম।


মূল ব্যবসা রেখে শেয়ার ব্যবসা

আল-আমিন কেমিক্যাল অধিগ্রহণের সময় ব্যবসা পরিকল্পনায় বলা হয়, কোম্পানিটি সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা শেয়ার ব্যবসায় লগ্নি করবে। তবে নতুন করে যে ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়, তার ১০ কোটি টাকা ২৮ লাখ টাকা শেয়ার ব্যবসায় খাটান নতুন পরিচালকরা। এর সঙ্গে শেয়ার কিনতে ঋণ (মার্জিন ঋণ) নেওয়া হয় ৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। নিজস্ব পর্যালোচনায় ডিএসই এ তথ্য পায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আল-আমিন কেমিক্যালের নামে তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এর মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজে একটি মার্জিন অ্যাকাউন্টসহ দুটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, যা পরিচালনা করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুন্সী শফি। এখানে লগ্নি আড়াই কোটি টাকা। দুটি অ্যাকাউন্টে ৭০ লাখ টাকা লোকসান রয়েছে। বাকি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজে, যা পরিচালনা করেন আবুল খায়ের হিরো। এখানে লগ্নি ছিল প্রথমে ১২ কোটি টাকা। গত বছর এখানে লোকসান প্রায় তিন কোটি টাকা।

কোম্পানির এমডি মুন্সী শফি জানান, এনআরবিসির অ্যাকাউন্টে মিউচুয়াল ফান্ডসহ কিছু ভালো শেয়ার ছিল। তা সত্ত্বেও কিছু লোকসান আছে। তবে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজে হিরো যে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন, তাতে তিনি নিজের কারসাজির শেয়ার কেনেন। তারপরও বড় লোকসান হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ৫ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনা হয়। বাকি সাত কোটি টাকা এবং মার্জিন ঋণ নিয়ে যেসব শেয়ার কেনা হয়, দরপতনে পুজিঁ দুই কোটি টাকায় নেমেছে বলে শুনেছেন তিনি। হিরো এ হিসাব কোম্পানিকে দেন না। এ অবস্থায় আল-আমিন কেমিক্যালের পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, লাভ-লোকসান যা-ই হোক না কেনো, হিরো অন্তত মূল টাকা ফেরত দেবেন। তবে ‘দিচ্ছি-দেবো’ করে এখনও টাকা ফেরত দিচ্ছেন না হিরো।

কারখানা চলছে যেনতেন উপায়ে

২০২২ সালে কোম্পানি অধিগ্রহণ করার পরই তড়িঘড়ি করে কোনোভাবে উৎপাদন শুরু করেন নতুন মালিকরা। এর পর ডিএসইর এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্তির আবেদন করেন। আবেদন পেয়ে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা জানতে সরেজমিন পরিদর্শনে যায় ডিএসই। স্টক এক্সচেঞ্জের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মোহাম্মদ জামিউল হক নামে একজন প্রডাকশন ম্যানেজার নিয়ে উৎপাদন চলছে, যার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস। একজন হিসাবরক্ষক এবং দৈনিক মজুরিভিত্তিক মাত্র সাতজন শ্রমিক নিয়ে উৎপাদন চলছে। কোম্পানির পরিবেশ ছাড়পত্রসহ বহু অনুমোদন ছিল না। উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল আমদানির ছাড়পত্রও ছিল না।
এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্তির আবেদনের সময় কোম্পানি জানায়, কারখানায় জিংক সালফেট এবং অ্যালুমিনিয়াম সালফেট উৎপাদন করা হবে। বাস্তবে কারখানায় সীমিত আকারে অ্যালুমিনিয়াম সালফেট ছাড়া অন্য কিছু উৎপাদনের প্রমাণ পায়নি ডিএসই। জিংক সালফেট উৎপাদনের যন্ত্রপাতি থাকলেও তা অকার্যকর ও আবর্জনায় ঢেকে থাকতে দেখেছে। এমনকি তৈরি অ্যালুমিনিয়াম সালফেটের ট্যাগ ছাড়া মজুত পাওয়া যায়। বস্তায় গলিত অবস্থায়ও এ কেমিক্যাল পড়ে থাকতে দেখা যায়। উৎপাদন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির কোনো নথি বা প্রমাণ পায়নি ডিএসই।

কারসাজির ছক

রুগ্‌ণ ও বন্ধ হিমাদ্রি লিমিটেড এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্তির পর ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল ৩৫ টাকায় কেনাবেচা হয়। এর মাত্র সাত মাস পর গত বছরের ১৫ নভেম্বর এর দর ১০ হাজার টাকায় ওঠে। কারসাজি করে এ দর বাড়ানো হয়। একইভাবে আল-আমিন কেমিক্যালের শেয়ার কারসাজি করে শতকোটি টাকা আয়ের ফন্দি করেন হিরো, মুন্সী শফি, জাবেদ এবং তাদের সহযোগীরা। অবশ্য মুন্সী শফি তা অস্বীকার করছেন।

ডিএসইর কর্মকর্তারা জানান, আল-আমিন কেমিক্যালের তিন কোটি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার আছে মাত্র ২৫ লাখ ৯১ হাজার, যা মোট শেয়ারের মাত্র ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অন্যদিকে হিরো, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং জাবেদের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর অংশ ৬৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। অন্যদিকে মুন্সী শফি এবং রফিকুজ্জামান ও মাশুক আলম নামে অপর দু’জনের নামে রয়েছে ৩৭ শতাংশ। সব আয়োজন শেষ করে আল-আমিন কেমিক্যালকে তালিকাভুক্ত করতে পারলে তারা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ রেখে বাকিটা বিক্রি করতে পারতেন। বিএসইসিকে দিয়ে তেমন একটা আদেশও নিতে পারতেন, যেমনটি পেপার প্রসেসিং, বিডি মনোস্পুল পেপার এবং এমারেল্ড অয়েলের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। আবুল খায়ের হিরো শেয়ারবাজারে অনিয়ম ও কারসাজিতে অভিযুক্ত। তাঁকে বিভিন্ন সময়ে জরিমানা করেছে বিএসইসি।

মালিকানায় কারা

আল-আমিন কেমিক্যালের মালিকানা বদলের ইতিহাস ঘেঁটে ডিএসই দেখতে পায়, দুই বছর আগে কোম্পানির সাবেক উদ্যোক্তা ও পরিচালক সৈয়দ আশিক, সৈয়দা আতিকা এবং তাজাক্কা তানজিমের কাছ থেকে তাদের সমুদয় শেয়ার কিনে নেন হিরো ও তাঁর সহযোগীরা। তবে নিজের নামে নয়; লাভা ইলেক্ট্রোড ইন্ডাস্ট্রিজ, মোনার্ক এক্সপ্রেস, মোনার্ক মার্ট এবং ইশাল কমিউনিকেশনের নামে শেয়ার কেনেন হিরো। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের আগের ৫০ লাখের সঙ্গে আরও আড়াই কোটি শেয়ার ইস্যু করে পরিশোধিত মূলধন ২৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩০ কোটি টাকা করেন। কিন্তু এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমোদন নেননি।

মালিকানার তথ্য পর্যালোচনায় ডিএসই জানতে পারে, উদ্যোক্তাদের শেয়ার ইশাল কমিউনিকেশন এবং মোনার্ক এক্সপ্রেসের নামে কিনেছেন হিরো। শেয়ার কেনার জন্য এ দুই প্রতিষ্ঠান লাভা ইলেক্ট্রোডস থেকে ঋণ নেয়। আবার লাভা ইলেক্ট্রোডস ঋণ দেয় হিরো এবং তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের কাছ থেকে পাওয়া পৌনে ২০ কোটি টাকা ঋণ থেকে। আল-আমিন কেমিক্যালের প্রধান শেয়ারহোল্ডার মোনার্ক এক্সপ্রেস এবং মোনার্ক মার্ট মূলত সাকিব, সাদিয়া হাসান এবং জাবেদ এ মতিন প্রতিষ্ঠিত মোনার্ক হোল্ডিংসের সহযোগী কোম্পানি। মোনার্ক হোল্ডিংসে তাদের মালিকানা সমান ৩৩ শতাংশ হারে। ইশাল কমিউনিকেশন এবং লাভা ইলেক্ট্রোডের মালিকানা হিরোর স্ত্রী ও নিকটাত্মীয়দের নামে।

কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুন্সী শফি উদ্দিন এক সময় সিএসইর সাবেক সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজের সিইও ছিলেন। বর্তমান অংশীদার ও পরিচালক এএফএম রফিকুজ্জামান এক সময় ব্রোকারেজ হাউসের মালিক ছিলেন। পরে ইএমইএস নামে ব্রোকারেজ হাউসের সিইও ছিলেন। অপর পরিচালক মাশুক আলম ওমনি স্টক নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক।

মুন্সী শফি জানান, শুরুতে এএফএম রফিকুজ্জামান ও মাশুক আলমকে নিয়ে আল-আমিন কেমিক্যালের মালিকানা কেনার পরিকল্পনা করেন। পরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির স্বার্থে হিরো এবং তাঁর সহযোগীদের সঙ্গী করেন। যেহেতু তাদের সঙ্গে বিএসইসির সম্পর্ক ভালো ছিল এবং অনেক টাকা আছে, সে কারণে এ প্রস্তাব দেন। তবে এখন মনে হচ্ছে, সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। তারা যুক্ত থাকার কারণে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত করা যাচ্ছে না।

মুন্সী শফি সমকালের কাছে স্বীকার করেন, হিরোকে আল-আমিন কেমিক্যালের মালিকানা নেওয়ার প্রস্তাব করার পর তারা বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেন। মোনার্ক মার্টের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ার কারসাজি অপরাধে দণ্ডিত এবং বাংলাদেশে ঋণ খেলাপি জাবেদ শুরুতে এ কোম্পানির পরিচালক হন। তবে তাঁর কারণে তালিকাভুক্তি আটকে যেতে পারে– স্টক এক্সচেঞ্জ এমন পর্যবেক্ষণ দেওয়ার পর বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত তাঁকে এ কোম্পানির পরিচালক পদ ছাড়তে বলেন। এর পর পরিচালক পদ ছাড়েন জাবেদ।

এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্তির আবেদন নাকচ

পরিদর্শনে নানা অসংগতি দেখার পর সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে গত জুন মাসে ডিএসই কোম্পানিকে ফের তালিকাভুক্তির আবেদন নাকচ করে দেয়। এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের পরিদর্শক দলের মন্তব্য ছিল, যে পরিকল্পনা নিয়ে আল-আমিন কেমিক্যালের ব্যবসা চালুর কথা জানিয়েছেন এর নতুন মালিকরা, তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি। নতুন মালিকরা তাদের ব্যবসা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আদৌ সক্ষম কিনা– তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডিএসইর এমন মন্তব্যের পর কোম্পানিকে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত করতে মরিয়া ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী। ডিএসইর পক্ষ থেকে তালিকাভুক্তির প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএসইসির তৎকালীন কমিশনার আব্দুল হালিম এবং নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলামের হাত ছিল মনে করে তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমেডিয়ারিস অ্যাফেয়ার্স বিভাগের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ডিএসই যেসব যুক্তিতে কোম্পানির আবেদন নাকচ করেছিল, সেগুলোর বিষয়ে আইনি ছাড় দিয়ে ডিএসইকে তালিকাভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।

আল-আমিন কেমিক্যালের এমডি মুন্সী শফি বলেন, একটি বন্ধ কোম্পানি চালু করা সহজ কাজ নয়। ডিএসই আমদানি সনদ ও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই বলে যুক্তি দিয়েছিল। তারা যখন গিয়েছিল, তখন এসব ছিল না, এখন আছে। তা ছাড়া এ ব্যবসা চালুর জন্য আমদানি লাইসেন্স আবশ্যক নয়। দেশীয় বাজার থেকে কাঁচামাল মিলে উৎপাদন শুরু করেন তারা। অ্যালুমিনিয়াম সালফেট উৎপাদন হচ্ছে। জিংক সালফেট উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। তবে এটি মৌসুমি ব্যবসা বলে এখন এর উৎপাদন নেই।
বিএসইসির অনুমোদন ছাড়া ২৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ বিষয়ে তিনি বলেন, কমিশনের কাছে এ বিষয়ে গেলে তারা ব্যাংক হিসাব খুলে শেয়ার মানি ডিপোজিট করতে বলেছিল। পরে মূলধন বৃদ্ধির অনুমোদন নিতে গেলে বলেছে, এখন লাগবে না। তালিকাভুক্তির সময় কার্যোত্তর অনুমোদন নিলে চলবে বলে লিখিত চিঠিও দিয়েছিল।

কেমিস্ট ছাড়াই অষ্টম শ্রেণি পাস প্রডাকশন ম্যানেজার দিয়ে রাসায়নিক পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম বিষয়ে মুন্সী শফি বলেন, অষ্টম শ্রেণি পাস হলেও তিনি অভিজ্ঞ। ব্যবসা পরিকল্পনা অনুযায়ী উৎপাদন কার্যক্রম না থাকার বিষয়ে বলেন, ডিএসই যখন কারখানা পরিদর্শনে যায়, তখন যথেষ্ট ক্রয় আদেশ ছিল না। মূল ব্যবসা রেখে শেয়ার ব্যবসায় মূলধনের প্রায় ৬০ শতাংশ, যুক্তি কী– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেহেতু এ কোম্পানির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত সবাই শেয়ার ব্যবসায় দীর্ঘ অভিজ্ঞ, সে কারণে অর্থ অলস ফেলে না রেখে শেয়ার ব্যবসায় খাটানো হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আবুল খায়ের হিরোর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে কোম্পানির এমডি মুন্সী শফির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। জাবেদ এ মতিনকে তাঁর মোবাইল নম্বরে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। সাকিব আল হাসানের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সূত্র : সমকাল।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

শেয়ারবাজার -এর সর্বশেষ