facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর সোমবার, ২০২৪

Walton

মহরম ও আশুরার তাৎপর্য


২৮ জুলাই ২০২৩ শুক্রবার, ১০:১০  এএম

ধর্ম ডেস্ক

শেয়ার বিজনেস24.কম


মহরম ও আশুরার তাৎপর্য

হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহরম। মহরম মানে সম্মানিত, মর্যাদাপ্রাপ্ত। মুসলিম ইতিহাসে এ মাসটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে গণনা হিসাবের মাস হলো ১২টি। যেদিন থেকে তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ সম্মানিত (সুরা তাওবাহ : ৩৬)।

রাসুল (স) বিদায় হজের ভাষণে বলেন, ‘সময় ও কাল আবর্তিত হয় নিজ চক্রে। যেদিন থেকে আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, এক বছর হয় ১২ মাসে। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। তিন মাস ক্রমান্বয়ে আসে। যেমন- জিলকদ, জিলহজ ও মহরম এবং রজব’ (বুখারি : ৪৪০৬)। অন্য হাদিসে মহরমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

মহরম মাসের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা নামে খ্যাতে। পৃথিবীর ইতিহাসে এদিন নানা তাৎপর্যময় ঘটনা ঘটে। আশুরাতেই নভোম-লে সৃষ্টিকুলের প্রাথমিক বিভাজন প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। হজরত আদম (আ)-এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও অবনমন- সব ঘটনাই ঘটেছিল আশুরায়। হজরত নুহ (অ)-এর নৌযানের যাত্রা আরম্ভ ও বন্যা অবস্থার সমাপ্তি ছিল আশুরাকেন্দ্রিক। হজরত মুসা আলাইহিস সাল্লামের সমুদ্রপথের ধাবমান রওনা ও এর তাওয়াক্কুল যাত্রায় যে সময় বেছে নেওয়া হয়েছিল, তা ছিল আশুরা। এই ধারাবাহিকতায় আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (স) কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথা আশুরার সময় বা আশুরাকেন্দ্রিক হতে পারে বলে আশা ও আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তা ছাড়া মহরমের দশম তারিখে ঐতিহাসিক ‘কারবালা’ সংঘটিত হয়েছিল। সেখানে ইয়াজিদি বাহিনীর হাতে অত্যন্ত নির্মমভাবে নবী (স)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা) সপরিবারে শাহাদতবরণ করেন। এই ঘটনা আশুরার তাৎপর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় উম্মতে মুহাম্মদির কাছে।

আরও পড়ুন: ওমরাহ যাত্রীদের জন্য সৌদির নতুন নির্দেশনা

মহরম মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর মাস মহরমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২/৩৬৮; জামে তিরমিজি, হাদিস ১/১৫৭)।

মহরমের রোজার মধ্যে আশুরার রোজার ফজিলত আরও বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি, অন্য সময় তা দেখিনি’ (সহিহ বুখারি, ১/২১৮)। আলী (রা)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে- যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন?

তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জনৈক সাহাবি করেছিলেন। তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুল (সা) বললেন, ‘রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তা হলে মহরম মাসে রাখো। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে- যেদিনে আল্লাহতাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন’ (জামে তিরমিজি, হাদিস ১/১৫৭)।

অন্য হাদিসে নবী কারিম (স) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহতাআলা অতীতের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন’ (সহিহ মুসলিম, ১/৩৬৭; জামে তিরমিজি, ১/১৫৮)।

আশুরার রোজা সম্পর্কে এক হাদিসে আছে, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরও একদিন রোজা রাখো’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস ১/২৪১)। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (স) বলেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তা হলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোজা রাখব’ (সহিহ মুসলিম, ১/৩৫৯)।

এদিন ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা হতে পারে। কারবালার প্রান্তরে শাহাদতবরণকারীদর জন্য দোয়া করা যেতে পারে। আল্লাহতায়ালা আমাদের বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: তাশফিক মুহাম্মদ, ইসলামী গবেষক ও প্রাবন্ধিক

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: