facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১১ মার্চ মঙ্গলবার, ২০২৫

Walton

মৃত্যুর ৭ মাস পর বাবা সেলিম: নবজাতকের কান্নায় শোকে ভাসলো পরিবার


০৯ মার্চ ২০২৫ রবিবার, ১২:৪৪  পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


মৃত্যুর ৭ মাস পর বাবা সেলিম: নবজাতকের কান্নায় শোকে ভাসলো পরিবার

অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করতেই ফুটফুটে নবজাতক দু’চোখ মেলে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে, যেন কাউকে খুঁজছে। কিন্তু জন্মের মুহূর্তেই সে যাকে সবচেয়ে বেশি খুঁজছে, সেই বাবা আর নেই। দাদি যখন ছোট্ট কাঁথায় জড়িয়ে নাতনিকে কোলে নিলেন, তখনো শিশুটির মা অপারেশন থিয়েটারে। নবজাতকের কান্না শুনে চারপাশের আত্মীয়স্বজনও আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না—সেলিম তালুকদারের অনুপস্থিতি যেন আনন্দের মুহূর্তকেও শোকে রূপান্তর করল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ সেলিম তালুকদারের কন্যা সন্তান জন্ম নিয়েছে গতকাল (শনিবার) রাত ৮টায়। ঝালকাঠি শহরের একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পৃথিবীতে আসে তার উত্তরাধিকার। কিন্তু মৃত্যুর সাত মাস সাত দিন পর বাবা হলেন সেলিম, যদিও সন্তানের মুখ দেখা আর তার ভাগ্যে জোটেনি।

একটি সন্তানের জন্ম, এক বাবার অনুপস্থিতির শোক

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম তালুকদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ জুলাই তার মৃত্যু হয়। অথচ মাত্র তিন দিন পর, ৪ আগস্ট ছিল সেলিম-সুমীর প্রথম বিবাহবার্ষিকী। স্বামী হারানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই জানতে পারেন, তিনি মা হতে চলেছেন।

গতকাল দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সুমী আক্তারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম নেয় ফুটফুটে কন্যা সন্তান। কিন্তু তার জন্ম আনন্দের পরিবর্তে সবার মনে ফিরিয়ে আনল এক অপূর্ণতার শূন্যতা।

শহীদের স্ত্রী বললেন, "সন্তানকে কারও কাছে হাত পাততে দেব না"

নিহত সেলিমের স্ত্রী সুমী আক্তার বলেন, "আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন। এই সন্তানই তার একমাত্র স্মৃতি। আমি শুধু চাই, আমার সন্তান যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয়। যতদিন বেঁচে থাকব, শহীদ সেলিমের স্ত্রী হয়েই থাকব এবং সন্তানের কাছে তার বাবার পরিচয় তুলে ধরব।"

মায়ের কান্না: "সেলিম থাকলে কত আনন্দ পেতো!"

সেলিমের মা সেলিনা বেগম এখনো ছেলের শোকে কাতর। তিনি বলেন, "সেলিম বেঁচে থাকলে প্রথম সন্তান দেখে কত আনন্দ পেতো! কিন্তু ওর ভাগ্যে তা ছিল না।"

তিনি আরও বলেন, "ছেলের চিকিৎসার জন্য ১৮ লাখ টাকার মতো ঋণ করতে হয়েছে, যা এখনো শোধ করতে পারিনি। আমার একটাই চাওয়া—আমার শহীদ সন্তানকে যেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়।"

সাধারণ চাকরিজীবী থেকে শহীদ হওয়ার গল্প

সেলিম তালুকদার (২৮) ছিলেন পোশাক কারখানার একজন সহকারী মার্চেন্ডাইজার। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে স্নাতক শেষ করে নারায়ণগঞ্জে একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। কিন্তু দেশে বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ন্যায়ের দাবিতে।

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই তিনি গুলিবিদ্ধ হন, ৩১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন, আর আজ ৭ মাস পর তার উত্তরাধিকার পৃথিবীতে এলো। নবজাতকের কান্নার মাঝেও যেন ফুটে উঠল এক শহীদের স্মৃতি, এক অপূর্ণতার ব্যথা।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: