facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২১ এপ্রিল সোমবার, ২০২৫

Walton

মেয়েদের নামের শেষে ‘খাতুন’ শব্দের রহস্য!


০৪ আগস্ট ২০১৬ বৃহস্পতিবার, ১০:৪৩  এএম

মুফতি মাহফুজ তানিম

শেয়ার বিজনেস24.কম


মেয়েদের নামের শেষে ‘খাতুন’ শব্দের রহস্য!

‘নামের বড়াই করো নাকো নাম দিয়ে কী হয়’-পংক্তিটা অনেকাংশে সত্য হলেও সুন্দর অর্থবোধক, মার্জিত ও রুচিসম্পন্ন নামের প্রভাবও গৌণ নয়। হজরত আবুদারদা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, কিয়ামতের দিন তোমাদের ডাকা হবে তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতার নামে। অতএব, তোমাদের নামগুলো সুন্দর করে রাখ।

তেমনিভাবে নামের শুরুতে বা শেষে বিভিন্ন উপাধিও আমরা যুক্ত করি, সেগুলোও সুন্দর অর্থবহ হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমাদের পাক-ভারত উপমহাদেশে মেয়েদের নামের শেষে খাতুন যুক্ত করা হয়। এ শব্দটির অর্থ, উৎপত্তি ও ব্যবহার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নেই।

বিখ্যাত আরবি অভিধান আল মুজামুল ওয়াসিতে এসেছে খাতুন মূলত তুর্কি ভাষার শব্দ এর বহুবচন খাওয়াতিন, এটি তুর্কি শব্দ খান বা খাকান এর স্ত্রীলিঙ্গ। আর খান শব্দের অর্থ অভিজাত ব্যক্তি, শাসক ইত্যাদি। বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে খান বা খাঁ একটি উপাধি যা বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। উৎপত্তিগত ভাবে মঙ্গোলীয় ও ও তুর্কী ভাষায় এর অর্থ সেনানায়ক, নেতা বা শাসক। খান বলতে গোত্রপতিও বোঝায়। খাতুন এবং খানম হলো এর স্ত্রী বাচক রূপ। সে হিসেবে খাতুন মঙ্গোলীয় ও তুর্কীতে রাজার রানী সমপর্যায়ের শব্দ। খান এবং খাতুন হিসাবে ঘোষণার পরে এই উপাধি দ্বারা একজন খান-এর রাজরানী (স্ত্রী) খানের সমপর্যায়ের সম্মান পাওয়ার যোগ্য হন।
বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে খাতুন শব্দের অর্থ রয়েছে, গৃহিণী, অভিজাত মহিলা ইত্যাদি। আরবি নামকোষ আল মাউসুয়াতুল আলামিয়্যাতে ড. মাহমুদ আল আক্কাম বলেন, সেলজুক শাসনামলে খাতুন শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। তখনকার সেলজুক সুলতানদের স্ত্রীদের খাতুন নামে ডাকা হতো, যেমন খাতুনে সুলতান সোলায়মান। তবে এর আগে ৭০০ হিজরির শুরুতে তুর্কিদের সাথে আরবদের মেলামেশা শুরু হলে আরবদের মাঝেও খাতুন শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। যেমন বিখ্যাত আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রীর নাম ছিল জুবাইদা খাতুন।

পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় খাতুন শব্দটি তুর্কিদের সূত্র ধরে ভারত উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। মোগল শাসনামলে ফার্সি ভাষায় খাতুনের অনুপ্রবেশ ঘটে। তখন এই শব্দটি অভিজাত মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় উর্দু এবং বাংলা ভাষায় তুর্কি খাতুন শব্দটি ঢুকে পড়ে। এখানকার মেয়েদের নামের পরে খাতুন শব্দের ব্যবহার অনেক লক্ষ করা যায়।

তবে এ খাতুন শব্দ নামের শেষে যুক্ত করার ব্যাপারে ইসলামের কোন বিধিনিষেধ নেই। আল-মাউসুআ আলফিকহিয়া কুয়েতিয়া তথা ‘কুয়েতস্থ ফিকহ বিষয়ক বিশ্বকোষ গ্রন্থে বলা হয়েছে- ইসলামে নাম রাখার মূলনীতি হচ্ছে- নবজাতকের যে কোনো নাম রাখা জায়েজ; যদি না শরিয়তে এ বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকে। [খ- ১১, পৃষ্ঠা- ৩৩১।] তাছাড়া ভালো অর্থবোধক নাম রাখা এটাও ইসলামের শিক্ষা। এর ফলে সেই ভালো অর্থটি নবজাতকের মাঝে প্রভাব ফেলার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। এটাকে তাফাউল বলা হয়।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: