০৯ মার্চ ২০২৫ রবিবার, ০১:১৭ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
![]() |
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আয়ের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে শীর্ষ ৩০ দেশ থেকে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৫ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।
গত ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও জানুয়ারিতে তা কমে যায়। অর্থনীতিবিদদের মতে, উৎসব-পরবর্তী মন্দা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমন্বয়ের কারণে এমনটি ঘটতে পারে।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিল ৫৬৫ দশমিক শূন্য চার মিলিয়ন ডলার, যা জানুয়ারিতে কমে ৪০৭ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্য থেকে ২৭৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা ডিসেম্বরে ছিল ২৪৮ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার।
একই সময়ে সৌদি আরব থেকে এসেছে ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। গত ডিসেম্বরে সৌদি আরব থেকে ২৯০ মিলিয়ন ডলার এসেছিল, যা জানুয়ারিতে প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়।
রেমিট্যান্স আয়ের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে থাকা আরব আমিরাত থেকে এসেছে ২ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। দেশটি থেকে গত ডিসেম্বরে এসেছিল ৩৭০ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলার, যা জানুয়ারিতে কমে ২৪৯ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
শীর্ষ ১০ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ৮৭৬ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলার এবং কুয়েত থেকে এসেছে ৮৬৭ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলার।
ইতালি, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। বিশেষত, গত জানুয়ারিতে ইতালি থেকে রেকর্ড ১৩১ মিলিয়ন ডলার এসেছে, যা সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও রেমিট্যান্স এসেছে যথাক্রমে ১৭৫ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার, ৯৯ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার এবং ৯৩ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার।
ঐতিহাসিকভাবে সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাত প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স কমেছে, অন্যদিকে দুবাইসহ আরব আমিরাতের অবদান বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই প্রবণতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা।’
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে প্রবাসীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এসব দেশ রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস হিসেবে রয়ে গেছে। এছাড়া, বিশেষ কিছু মৌসুমে—যেমন ঈদ, পূজা এবং শীতকালে বিয়ের মৌসুমে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ে।’
বাংলাদেশের অর্থনীতি রেমিট্যান্সের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবণতা, অভিবাসন নীতি ও শ্রমবাজারের পরিবর্তনের কারণে রেমিট্যান্স উৎসেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে ৩ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
একই সময়ে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স ২ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।
দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ১১৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতির দিকে রয়েছে। কাতার ও ওমান থেকে প্রাথমিকভাবে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা কমেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ওমান থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮৯৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কমে ৭৬৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, ‘করোনার পর বৈশ্বিক মুদ্রাবাজার অস্থির হয়ে ওঠায় রেমিট্যান্স এগ্রিগেটরের সংখ্যা বেড়েছে। এর ফলে কাতার ও ওমান থেকে আসা রেমিট্যান্স কমেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে।’
বিশ্লেষকদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহের এই পরিবর্তন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন, যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।