২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সোমবার, ০৩:৪৩ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত সেগুলো হলো- কোম্পানির মৌল ভিত্তি, ইপিএস, পিই রেশিও, ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড, মুনাফা দেয়ার প্রবণতা, রিজার্ভ ও সঞ্চিতি, সংশ্লিষ্ট খাতের সম্ভাবনা ও আশঙ্কা, এনএভি, শেয়ারের তারল্য (ফ্লোটিং), ঝুঁকির উপাদান (রিস্ক ফ্যাক্টর), কোম্পানির ঋণ এবং দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। এসব টার্মের অর্থ সহজভাবে তুলে ধরে উপস্থাপিত প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব থাকছে আজ।
পিই রেশিও: পিই রেশিও বা মূল্য-আয় অনুপাতের মাধ্যমে বুঝা যায়, শেয়ার কেনার পর কোম্পানির লভ্যাংশ দিয়ে মূল টাকা ফেরত আসতে কত সময় লাগবে। যেমন কোনো কোম্পানির পিই রেশিও যদি ১০ হয়। তবে বুঝতে হবে ওই কোম্পানির শেয়ার কিনে লভ্যাংশ প্রাপ্তির মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত আসতে ১০ বছর সময় লাগবে। এক্ষেত্রে কোম্পানির আয় অপরিবর্তনীয় থাকতে হবে। সাধারণত পিই রেশিও ১৪ থেকে ১৮ এর মধ্যে থাকা পর্যন্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা নিরাপদ ধরা হয়। কিন্তু এর চেয়ে বেশি হলে বিনিয়োগে ভাবতে হবে। কারণ পিই রেশিও যত বেশি হবে ঝুঁকিও তত বেশি হবে। তবে যদি কোম্পানির আয় সামনে বাড়ার সম্ভাবনা থাকে তবে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। কারণ সেক্ষেত্রে আয় বাড়ার পর পিই রেশিও কমে যাবে। তাছাড়া পিই রেশিও কম হলেও যদি সামনে কোনো কোম্পানির আয় কমে যাওয়ার কারণ থাকে তবে ওই কোম্পানিতেও বিনিয়োগ করা উচিত হবে না।
ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড: যদি কেউ কোম্পানির লভ্যাংশ নেয়ার মাধ্যমে লাভবান হতে চায় সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী প্রতি শেয়ারের বর্তমান দামের বিপরীতে কতটুকু লভ্যাংশ পাচ্ছে তাই বিবেচনা করা হয় ডিভিডেন্ড ইয়েল্ডের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে যে কোম্পানির ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড বেশি হবে সে কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করাই হবে লাভজনক। অর্থাত্ দুটি কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা করলে কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করা বেশি লাভজনক হবে তাই বিবেচনা করা হয় ডিভিডেন্ড ইয়েল্ডের মাধ্যমে। ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড বের করতে হয় শেয়ার প্রতি বার্ষিক লভ্যাংশ/প্রতি শেয়ারের দাম এ সূত্র ব্যবহার করে। উদাহরণ স্বরূপ ধরা যাক, `এ` ব্যাংক ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ কোম্পানির প্রতি শেয়ারের দাম ১৫০ টাকা। আর `বি` ব্যাংক ৬০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ কোম্পানির প্রতি শেয়ারের দাম ২৫০ টাকা। এখন কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করা উচিত হবে তা বের করতে হবে ডিভিডেন্ড ইয়েল্ডের মাধ্যমে। দেখতে হবে কোন কোম্পানির ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড বেশি।
এখানে `এ` ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড হচ্ছে ৩৩ শতাংশ (৫০/১৫০=০.৩৩৩৩৩৩)। আর `বি` ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড ২৪ শতাংশ (৬০/২৫০=০.২৪)। অর্থাত্ এক্ষেত্রে `এ` ব্যাংকের শেয়ার কেনাই লাভজনক হবে। কারণ `এ` ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড বেশি।
মুনাফা দেয়ার প্রবণতা: কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার আগে সে কোম্পানির মুনাফা দেয়ার প্রবণতা কেমন তা বিবেচনা করতে হবে। যেসব কোম্পানির পূর্বতন মুনাফা দেয়ার প্রবণতা ভালো সে কোম্পানি ব্যবসায় যদি বড় কোন ঝুঁকি না থাকে তবে মুনাফা ও লভ্যাংশ দেয়ার সম্ভাবনাও ভালো থাকে। কারণ দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ কোম্পানির মুনাফা করার ইতিহাস ভালো। তবে কোনো কোম্পানি যদি মুনাফা করেও লভ্যাংশ বিতরণ না করে তা খারাপ কিছু নয়। কারণ এর মাধ্যমে সামনে ওই কোম্পানি আরও ভালো করার সুযোগ পায়। তাই মুনাফা না দিয়ে যদি কোনো কোম্পানির ক্যাটাগরি জেড ক্যাটাগরিতেও চলে যায় তাহলেও ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ এ কোম্পানি ওই মুনাফা দিয়ে হয় পুনরায় উৎপাদনে বিনিয়োগ করছে কিংবা রিজার্ভ ও সঞ্চিতি বাড়াচ্ছে।
রিজার্ভ ও সঞ্চিতি: কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওই কোম্পানির রিজার্ভ ও সঞ্চিতির পরিমাণ বিবেচনা করা প্রয়োজন। কারণ কোনো কোম্পানির যদি সঞ্চিতি নেতিবাচক থাকে তবে বুঝতে হবে ওই কোম্পানির পূর্বতন পুঞ্জিভূত লোকসান রয়েছে। আর তা পূরণে বর্তমান বছরের মুনাফার অর্থও ব্যবহূত হতে পারে। ফলে বর্তমান বছরে লাভ করলেও তা লভ্যাংশ হিসেবে নাও দিতে পারে। আর যদি কোনো কোম্পানির রিজার্ভ বেশি থাকে ওই কোম্পানি বর্তমান বছরে মুনাফা না করলেও লভ্যাংশ দিতে পারে। ফলে কোম্পানির লভ্যাংশ দেয়ার সম্ভাবনা বিবেচনায় রিজার্ভ ও সঞ্চিতি কত রয়েছে তা বিবেচনা করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট খাতের সম্ভাবনা ও আশঙ্কা: কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনার আগে ওই কোম্পানির ও সংশ্লিষ্ট খাতের সম্ভাবনা ও ঝুঁকির কথা ভাবতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যদি সামনে কোন খাতে কোনো ধরনের ঝুঁকি আসতে পারে বলে মনে হয় তবে এ খাতের কোনো কোম্পানির শেয়ার না কেনাই ভালো। তবে খাতের সম্ভাবনা কম হলেও যদি কোনো কারণে একটি কোম্পানির সম্ভাবনা ভালো থাকে তবে ওই কোম্পানির শেয়ার কেনা যেতে পারে। এভাবে যে কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনার আগে সংশ্লিষ্ট খাতের সম্ভাবনা ও ঝুঁকির কথা বিবেচনা করতে হবে।
এনএভি: এনএভি বা শেয়ার প্রতি সম্পদ বলতে কোনো কোম্পানির প্রতি শেয়ারের বিপরীতে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার পরিমাণ। উদাহরণ স্বরূপ কোনো কোম্পানির নিট সম্পদ যদি হয় ১০০০ টাকা। আর মোট শেয়ারের পরিমাণ হয় ১০টি তবে শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ হল ১০০ টাকা। এনএভি যত বেশি হবে ওই কোম্পানির শেয়ারও ততো ভাল। যদি কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ওই কোম্পানিটি উইন্ড আপ করতে চায় বা বন্ধ করে দিতে চায় সেক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডার এনএভির সমান টাকা ফেরত পাবেন। অবশ্য এক্ষেত্রে প্রথমে কোম্পানির অন্য ঋণ আগে পরিশোধ করা হবে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনার ক্ষেত্রে এনএভি বিবেচনা করা সবচেয়ে বেশি জরুরী। কারণ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উইন্ড আপের সময় বিনিয়োগকারী এনএভি`র সমান টাকাই পাবেন।
শেয়ারের তারল্য বা ফ্লোটিং: শেয়ার তারল্য বলতে কোনো কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের আধিক্যকে বুঝায়। একটি কোম্পানির শেয়ার যত বেশি লেনদেন হয় সে কোম্পানির তারল্য ততো বেশি। একটি কোম্পানির তারল্য বেশি হলে ওই কোম্পানির শেয়ার বিক্রিতে কোনো ঝামেলা থাকে না। কিন্তু ফ্লোটিং না হলে ওই শেয়ার বিক্রিতে ঝামেলায় পড়তে হয়। তাই শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে শেয়ার লেনদেনের পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হয়। আমাদের বাজারেও কিছু শেয়ার রয়েছে যেগুলোর লেনদেন খুব কম হয়। ফলে সেসব কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে ঝামেলায় পড়তে হয়। তা বিবেচনা করেই শেয়ার কিনতে হবে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।