০৭ জানুয়ারি ২০১৭ শনিবার, ০৪:১০ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হেলাল বলেন, বেশ কিছু কারণে আমাদের বাজারে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা সহজ। প্রথমত এসব কোম্পানির বেশির ভাগই স্বল্প মূলধনি। দ্বিতীয়ত জেড শ্রেণির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তিতে ১০ দিন সময় লাগে। দিনে দিনে এসব শেয়ার বিক্রি করে অন্য শেয়ার কেনা যায় না। ফলে কারসাজিকারীদের পক্ষে ‘জেড’ শ্রেণির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা সহজ। আগে থেকে কিছু শেয়ার কিনে তারপর ধাপে ধাপে দাম বাড়িয়ে আস্তে আস্তে হাতের শেয়ারগুলো ছেড়ে দেন। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দাম বাড়াতে শুরু করলে সেসব শেয়ারের প্রতি আকৃষ্ট হন। একপর্যায়ে কারসাজিকারী সব শেয়ার বিক্রি করে ওই সব কোম্পানি থেকে বেরিয়ে যান। তখনই এসব কোম্পানির অস্বাভাবিক দরপতন ঘটতে থাকে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে গত বুধবার দরপতনের শীর্ষে ছিল দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো। দরপতনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮টিই ছিল দুর্বল মৌলভিত্তির ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত। বেশ কিছুদিন ধরে এসব কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটছিল।
জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানিগুলো হচ্ছে মেঘনা পিইটি, ঝিলবাংলা, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, শ্যামপুর সুগার, দুলামিয়া কটন, রহিমা ফুড, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ও সমতা লেদার। এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম গতকাল সর্বনিম্ন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এর বাইরে ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড ও এশিয়া প্যাসিফিক ইনস্যুরেন্স দরপতনের শীর্ষ ১০-এর তালিকায় ছিল।
জেড শ্রেণিভুক্ত ৮ কোম্পানির সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি খতিয়ে দেখতে গত ডিসেম্বরে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মধ্যে ৫টিই গত বুধবার দরপতনের শীর্ষ তালিকায় ছিল। কোম্পানি ৫টি হলো মেঘনা পিইটি, ঝিলবাংলা সুগার, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, শ্যামপুর সুগার ও রহিমা ফুড।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়া যেভাবে দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছিল, দরপতনের ক্ষেত্রে সেই ধারাই দেখা গেছে গত বুধবার। কারণ, অস্বাভাবিক উত্থান ঘটলে অস্বাভাবিক পতনও ঘটে এটাই বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম।
একদিকে যখন দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির দরপতন ঘটছে, অপরদিকে তখন লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যম ও উন্নত মানের কোম্পানিগুলোর আধিপত্য একটু একটু করে বাড়ছে। এ কারণে বাজারের সূচকও ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে।
ঢাকার বাজারে বুধবার হঠাৎ করেই লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ স্থানে উঠে আসে আরগন ডেনিমস।
এদিন ডিএসইতে এককভাবে কোম্পানিটির প্রায় ৪৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় পৌনে ৪ শতাংশ। আর প্রতিটি শেয়ারের দাম এদিন ৩ টাকা ২০ পয়সা বা প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকা ৩০ পয়সায়।
মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরগন ডেনিমসের কারণে বুধবার খাতভিত্তিক লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে বস্ত্র খাত।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরীর মালিকানাধীন কোম্পানিটির ‘রপ্তানি আদেশ ও পরিবেশবান্ধব কারখানায় রূপান্তরের’ বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা ধরনের তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের নিশ্চিত করা হয়, এ ধরনের প্রচারণার বিষয়ে কোম্পানির কোনো সম্পৃক্ততা এবং তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আরগন ডেনিমসের যেসব তথ্য রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি
কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণ সম্পন্ন করেছে। ঘোষিত লভ্যাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর ব্যাংক হিসাবে এবং বোনাস লভ্যাংশ বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) হিসাবে জমা হয়েছে। অনেক সময় বোনাস শেয়ার বেশি দামে বিক্রি করার প্রবণতা থেকে বাজারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়ে থাকে বলে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।