facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০৮ সেপ্টেম্বর রবিবার, ২০২৪

marcelbd

রংপুরে ক্ষুরা রোগে মরছে গরু, দিশেহারা খামারিরা


১৫ জুলাই ২০২৪ সোমবার, ১২:২৫  পিএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


রংপুরে ক্ষুরা রোগে মরছে গরু, দিশেহারা খামারিরা

রংপুর নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ করে ক্ষুরা রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। এতে মারা যাচ্ছে গরু এবং গরুর বাছুর। এছাড়াও আক্রান্ত হয়েছে কয়েকশ গরু। সরকারি ও বেসরকারি ভ্যাক্সিন ও চিকিৎসা সেবা কোনো কাজেই আসছে না। একারণে গরু নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন খামারিরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যে আক্রান্ত গরুর রক্ত সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এটি ক্ষুরা রোগের নতুন ধরণ বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর রংপুর সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলায় ছোটবড় মিলে প্রায় ২৫ হাজার গরুর খামার রয়েছে। খামার মালিক ও কৃষকদের মিলে ছোটবড় মিলে কয়েক লাখ গরু রয়েছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৭ জুলাই রংপুর নগরীর সৌরভ ডেইরির পরপর ২ দিনে ৭টি গরু মারা যায়। এছাড়াও সম্প্রতি রংপুর নগরীর মধ্যে মাহিগঞ্জ এলাকার ছোট রংপুর এলাকার রোকসানা বেগমের ৫টি, দিলিপ চন্দ্রের দুইটি, সাজু মিয়ার দুইটি, বাবুল মিয়ার দুইটি উন্নত জাতের গরুর মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে বড় রংপুর, জোড়ইন্দা, সাতমাথা, মাহিগঞ্জসহ হারাগাছ, তামপাট ও পীরগাছা, কাউনিয়া এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব গেছে। এতে অনেক খামারি চরম দুশ্চিন্তায় পরেছেন। তবে এবারের ক্ষুরা রোগের ধরন ভিন্ন ও শক্তিশালী। গরু আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং জাবর কাটা বন্ধ করে দেয়। গায়ে মাত্রারিক্ত জ্বর থাকে। জিব্বা ও পায়ের ক্ষত দেখা যায়।

কয়েকজন খামারি জানান, গরুর যে হারে ক্ষুরা রোগ দেখা দিয়েছে তাতে আমরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছি। কারণ এবারের ক্ষুরা রোগ প্রতিবছরের মতো নয়, হালকা করে দেখার সুযোগ নাই। এবারের ধরন মারাত্মক শক্তিশালী। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাক্সিন সরবরাহসহ মনিটরিং দাবি করেন তারা।

অন্যদিকে, ক্ষুরা রোগের ভ্যাক্সিন অধিক মূল্যবান ফলে সবার পক্ষে এই ভ্যাক্সিন ক্রয় করে গরুকে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। সরকারিভাবে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হলে ক্ষুরা রোগ থেকে গরু রক্ষা পাবে বলে খামারিরা মনে করেন।

সুরভী ডেইরি ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী দিগন্ত জানান, আমার খামারের গত সপ্তাহে দুইদিনে বাছুরসহ ৭টি গরু ক্ষুরা রোগে মারা গেছে। যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৫ লাখ টাকা। অসুস্থ গরুগুলোকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে নেওয়া ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছিল। তারপরও ক্ষতি হয়ে গেল। এখনও সঙ্কা কাটেনি।

নগরীর কলেজ রোড খামার পাড়ার মনি বেগম বলেন, খামারের পালিত গরু ক্ষুরা ও ল্যাম্পিং স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। গরুটির বর্তমান বাজার মূল্য লক্ষাধিক টাকা।

ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম আসিফুল ইসলাম আসিফ বলেন, ক্ষুরা রোগ নিয়ে খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। অনেক খামারির গরুর মারা গেছে। ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এমনিতে গো খাদ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। তাতে ভ্যাক্সিন আর গরুর চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

এ বিষয়ে ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের রংপুর বিভাগীয় ও জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন বলেন, খামারিরা বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করছেন। ক্ষুরা রোগের কারণে অনেক গরু মারা যাচ্ছে। অনেকেই প্রতিরোধক হিসেবে আগাম ভ্যাক্সিন দিয়েছে গরুকে। তারপরও কাজ হয়নি। বিশেষ করে সরকারি ভ্যাক্সিন কোনো কাজে আসছে না। বেসরকারি ভ্যাক্সিনও অনেক সময় কাজ করছে না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর রংপুর খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছে কিন্তু ক্ষুরা রোগ এক ধরে গেলে আর করার কিছু থাকে না কারোই। শুধু পরিচর্চা ছাড়া।

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক বলেন, ইতোমধ্যে যে খামারের গরু ও গরুর বাছুর মারা গেছে, সেই খামার পরিদর্শন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আক্রান্ত গরুর রক্ত সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা নিরীক্ষার ফল পাওয়া গেলে এরপর করণীয় কি তা নির্ধারণ করা যাবে। তাছাড়া ক্ষুরা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, গরু এ রোগে আক্রান্ত হবার আগে বছরে দুই বার ৬ মাস পরপর ক্ষুরা রোগের ভাকসিন প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এতে রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: