facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ অক্টোবর শনিবার, ২০২৪

Walton

শখের ছাগল পালনে কোহিনূরের ভাগ্য বদল


২১ মে ২০২৩ রবিবার, ১১:১৭  এএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


শখের ছাগল পালনে কোহিনূরের ভাগ্য বদল

বছর দুয়েক আগে শখের বসে ছাগল পালন শুরু করেছিলেন কৃষক ফেরদৌস মিয়ার স্ত্রী মোসা. কোহিনূর বেগম। শুরুতে মাত্র ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনলেও বর্তমানে তার খামারে ছোটবড় মিলে মোট ছাগল রয়েছে ৫০টি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। তার খামারে দেশি ছাগলের পাশাপাশি রয়েছে বিদেশি প্রজাতির ছাগল।

মাদারীপুর সদর উপজেলা উত্তর মহিষেরচর এলাকায় কোহিনূর বেগম তার বসতবাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন ছাগলের খামার। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় শখের ছাগল পালন এখন তার পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাগলের খামার বড় করার আশায় বাড়ির পাশে আরেকজনের পতিত জমিও ক্রয় করেছেন তিনি।

কোহিনূর বেগম বলেন, ২০২১ সালে শখের বসে ১২ হাজার টাকায় একটি ছাগল কিনে লালন-পালন শুরু করি। এক বছরের মধ্যে ছাগলটি ৮টি বাচ্চা দেয়। ওই ছাগলগুলো বিক্রি করে তা থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। এরপর সিদ্ধান্ত নেই ছাগলের খামার করার। এরপর ইউটিউব দেখে যমুনা পাড়ি, তোজাপাড়ি ও ব্লাক বেঙ্গল প্রজাতির ছাগল কিনে ম্যাচিং পদ্ধতিতে খামার গড়ে তুলি। এখন খামারে তিন প্রজাতির ৫০টি ছাগল রয়েছে।

তিনি বলেন, আমি নিজেই ছাগলের খাওয়ানো ও পরিচর্যা থেকে শুরু করে ছাগলের সবকিছু দেখাশুনা করে থাকি। তবে এ কাজে আমার পরিবারের লোকজনও সহযোগিতা করে। এছাড়া বাড়ির পাশের পতিত জায়গায় আবাদ করেছি হাইড্রোপ্রোনিক ঘাস (মাটি ছাড়া ট্রেতে আবাদ করা ঘাস)। যা ছাগলের জন্য উৎকৃষ্টমানের খাবার। সেই ঘাস দিয়েই ছাগলের খাবারের বেশিরভাগ চাহিদা মেটাচ্ছি। এছাড়া আমার স্বামী সংসার ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগানোর জন্য মাদারীপুর শহরের ভ্যানে করে সবজি ও পিয়াজ ও মরিচ বিক্রি করেন। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতো সংসার চলে।

তিনি জানান, এই একটি মাত্র প্রাণী যার বছরে দুবার প্রজনন ক্ষমতা রয়েছে। প্রতিবার প্রজননে একাধিক বাচ্চা দেয়। রোগ-বালাইও কম হয়। বছরে একবার পিপিআর, গডপক্স ভ্যাকসিন দিলেই আর কোনো ওষুধ লাগে না। তাই অল্প খরচে বেশি আয় করা সম্ভব। যেখানে একটি বিদেশি গাভী পালন করলে প্রতিদিন ৩০০ টাকার খাবার খায় সেখানে ৩০০ টাকা হলে প্রতিদিন ৩০টি ছাগলকে খাওয়ানো যায়। ছাগলের খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো হয় গম, ভুট্টা ও ছোলা বুটের গুড়ো, সেই সঙ্গে সয়াবিন ও খড়ের ছন। যা ছাগলের জন্য খুবই পুষ্টিকর।

কোহিনূর বেগম বলেন, আমার ছাগলের খামার দেখতে প্রতিদিন লোকজন আসছেন। তারা আমার কাছে এ সম্পর্কে ধারণা ও নানা ধরনের পরামর্শ নিচ্ছেন। তারাও ছাগলের খামার গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

কোহিনূরের স্বামী ফেরদৌস বলেন, এক সময় আমার কোনো জায়গা-জমি ছিল না। আমার স্ত্রীর অদম্য ইচ্ছায় আজ আমাদের খামারে ৫০টি ছাগল আছে। এই যে দেখছেন, এদের খাওয়াচ্ছি। আমার বাড়ির সবাই এই ছাগলের পেছনে সময় কাটায়। এদের দেখাশোনা, খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করাই আমার স্ত্রীর কাজ। আমি গত বছর ৫০ হাজার টাকারও বেশি ছাগল বিক্রি করেছি। কিন্তু ছাগলের খামারটি বড় ও ছাগলের খাবার কাঁচা ঘাসের ব্যবস্থা করার জন্য কিছু জমি রাখা ও খামার ঘর তৈরি করায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার ঋণ হয়ে গেছি। এখন ঋণ টানবো না ছাগলের পিছে খাবার কিনে আনবো সে টাকা আমাদের কাছে নেই। কিন্তু ছাগল সঠিকভাবে পালন করতে পারলে অল্পতেই উন্নতি করা যাবে। আমাদের জমি এবং ঘর না তোলা লাগলে প্রতিবছর ভালো টাকা লাভ আসতো এই ছাগলের খামার থেকে।

মাদারীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ছাগল পালন করে মোটামুটিভাবে সফল হয়েছেন কোহিনূর বেগম। আমরা নিয়মিত তার ওই ছাগলের খামার পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে দিচ্ছি। এখন অনেকেই ছাগলের খামার গড়ে তুলতে পরামর্শের জন্য আমাদের কাছে আসছেন। তাদেরকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খামার বৃদ্ধি করার জন্য যদি কোহিনূর বেগমের ঋণের প্রয়োজন হয় আর সে যদি ঋণের জন্য আবেদন করে তাহলে আমরা তাকে সুপারিশ করব।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: