১৫ মে ২০২৪ বুধবার, ১০:৫৯ এএম
অজিত কুমার মহলদার
শেয়ার বিজনেস24.কম
![]() |
অজিত কুমার মহলদার |
সমাজে কথিত আছে, “প্রচারেই প্রসার।” ডিজিটাল যুগে ‘মার্কেটিং’ একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। এখনকার ‘ডিজিটাল যুগ’-এ শব্দজালে মোহাচ্ছন্ন করতে হবে আমজনতাকে। ‘নেতা নয়, জনতাই প্রধান অস্ত্র’ একটি রাজনৈতিক দলের। একটি দলকে জনতার কাছে পৌঁছাতে হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে নিজ নিজ দলের মার্কেটিং করতে না পারলে এক সময় হারিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
আগে বলা হতো- যে যতো গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে পারবে তার ততো জনসংযোগ-গণসংযোগ বাড়বে। ডিজিটাল মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপন অনেকটা সংবাদমাধ্যম-গণমাধ্যম-সামাজিক মাধ্যমের যোগাযোগ কৌশল। এছাড়াও আমজনতার কাছে পৌঁছনোর অনেক কৌশল থাকতে পারে। সেটা হলো বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, আবিষ্কার, মহাসড়ক, বিভিন্ন বিষয়ের নামকরণ, থিওরির নামকরণ, ফলফলাদির নামকরণ, স্থানের নামকরণ দিয়ে গণসংযোগ করা যেতে পারে।
আমাদের দেশে উচ্চফলনশীল পেয়ারার উদ্ভাবক কৃষিবিজ্ঞানী কাজী এম বদরুদ্দোজা। তাঁর নামেই ‘কাজীপেয়ারা’ খ্যাত দেশে। রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে গমনদ্বার ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’কে বলা যায়। এটির নামকরণ হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এ বিষয়গুলোকে প্রচারণার অংশ হিসেবে ধরে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে যাঁরা ভূমিকা রেখেছিলেন তাঁদের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ আরও জোরদার করতে হবে।
শেখ জামাল, একজন কিশোর বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ‘চাপা স্বভাব’-এর লোক ছিলেন বলে অনেকে দাবি করেন। আমি এটা মানতে রাজি নই, কারণ তিনি একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণ্ডি পেরিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। মুক্তিযুদ্ধ করেন। তিনি টগবগে কিশোর। তিনি প্রাণোচ্ছ্বল তরুণ। তাঁর জন্ম ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। এই বলীয়ান কিশোরের অবদান আরও স্মরণীয় করতে সরকার বহুমাত্রিক উদ্যোগ নিতে পারে। তাঁকে মানুষের মণিকোঠায় স্থান পেতে আওয়ামী লীগও ভূমিকা রাখতে পারে। ইতিমধ্যে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, এর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই শেখ জামালের নামে রাজধানীর ধানমন্ডি ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড রাখা হয়। এই ক্লাবের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে শেখ জামাল ক্রিকেট একাডেমি, এতে রয়েছে ব্যায়ামাগার, ক্রিকেট চর্চার সুযোগ।
ফরিদপুর শহরের স্বাধীনতা চত্বরের কাছে ফরিদপুর স্টেডিয়াম, এখানে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা হয়। ২০০০ সাল থেকে এটি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ ও ক্রীড়ামোদীদের দাবিতে ২০১৪ সালে এই স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শেখ জামাল স্টেডিয়াম। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের হাজীপুর এলাকায় সোনাতলা নদীর ওপর শেখ জামাল সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
শেখ জামাল ইনানী জাতীয় উদ্যান, এটি একটি সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যান। এটি কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলায় অবস্থিত। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালের ৯ জুলাই এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে।
বঙ্গবন্ধুর ‘সুখী পরিবার’। এই পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুত্র শহীদ শেখ জামালের ক্রীড়াঙ্গনে অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে রাজধানীর রমনায় অবস্থিত জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্সকে লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল জাতীয় টেনিস কমপ্লেক্স হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। গাজীপুরের বর্তমান সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি এই নামকরণ করা হয়। শেখ জামাল নিজেও একজন টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি শিল্পসংস্কৃতির মানুষ। যেসব বিশ^বিদ্যালয়ে নাটক, সংগীত, নৃত্য বিভাগ রয়েছে, সেই সকল বিশ^বিদ্যালয়ে তাঁর নামে হলের নামকরণ করা যেতে পারে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের কার্যক্রম চলছে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় শহীদ শেখ জামাল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু হয়েছে। এছাড়া দেশে শেখ জামাল শিশু পার্কও আছে। তাঁর নামে দেশের আরও অনেক বিষয়ের নামকরণ করতে হবে। যেমন- রেল জংশনের নামকরণ, মহাসড়কের নামকরণ করা যেতে পারে। গবেষণাগারে নতুন কিছু আবিষ্কৃত হলে গবেষক স্বপ্রণোদিত হয়ে শেখ জামালের নামে তা নামাঙ্কিত করতে পারেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের পরে দেশে কয়েকটি সেনানিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। আশা করছি, এই সেনানিবাসের নামকরণ শেখ জামালের নামে হবে।
শেখ জামাল সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ করতেন সকলকে। সর্বমহলে তিনি খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন নয়নমণি। কর্মজীবনে তিনি নৈতিকতা, সততা বজায় রেখেছেন। দেশপ্রেম এবং কাজের প্রতি একনিষ্ঠ। তিনি নিরহংকার ছিলেন। জীবনযাপনে তিনি সাদামাটা। রেখাপাত করেছিলেন সতীর্থ-সহপাঠির মণিকোঠায়। ব্যক্তিজীবনের নানামুখী গুণ আর প্রতিভার কারণে শেখ জামালকে সমাজের প্রতিটি স্তরে উচ্চ আসন দিতে হবে। উচ্চমার্গে স্থান দিয়ে ইতিহাসে উজ্জ্বল করে রাখতে হবে।
শেখ জামাল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট মাত্র ২১ বছর ৪ মাস বয়সে দেশীয় কুখ্যাত সামরিক সদস্যের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন। শুধুমাত্র জন্ম ও মৃত্যু দিবসে কাউকে স্মরণ না করে, তাকে কিভাবে সারাক্ষণ-চিরস্মরণীয় রাখা যায় সেই কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তদ্রুপ অকালপ্রয়াত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা, বন্ধু-অন্তঃপ্রাণ ও দুঃসাহসিক তরুণ শেখ জামালের অবদান চিরকাল বিনম্র শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবো আমরা।
খ্যাতনামা মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেছেন, মানব মনে প্রোথিত থাকে ‘বড় বা মহৎ হওয়ার আকাঙ্খা’। প্রখ্যাত দার্শনিক জন ডিউকও বর্ণনা করেছেন, ‘বিখ্যাত হওয়ার বাসনা’ থাকে সকলের অন্তরে। এছাড়া আমরা জানি; ভালোবেসে, কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়িয়ে, উপহার দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায়। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ উপলক্ষ্যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কার্যক্রম উদ্বোধন করে দেশবাসীকে উপহার দেন। এই সমস্ত উপহারের নামকরণ শেখ জামালের নামে করলে আমরা তাঁকে মহত্বের আসনে দেখতে পারবো। আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি শেখ জামালের নামে করতে পারে। এবারের গ্রীষ্মের দাবদাহে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ বেশকিছু কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। নাগরিককে স্বস্তি দিতে পানীয় জল বিতরণ করা হয়েছে, বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। এই সকল কর্মকাণ্ডে শেখ জামালের নাম জুড়ে দেওয়া যেত। এছাড়াও যে যে ক্ষেত্রে তাঁর অবদান বেশি ছিল, অন্তত সেই সকল ক্ষেত্রের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে তাঁর নামে কর্মকাণ্ডকে বেগবান করতে পারি আমরা।
লেখক: প্রাক্তন নির্বাহী সদস্য, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। [email protected]
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।