১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রবিবার, ০৭:০৩ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
![]() |
দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, কারণ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি এখন দুর্বল মানের বলে চিহ্নিত হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, বাজারে বর্তমানে ৩৫০টি কোম্পানির মধ্যে ১০৩টি জেড শ্রেণিভুক্ত, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক খবর।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে শেয়ারবাজারে জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩টিতে। এর মধ্যে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকও নতুন করে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। ২০২২ সালে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই ব্যাংক মাত্র তিন বছরের মধ্যেই দুর্বল মানের কোম্পানির তালিকায় চলে গেছে। এছাড়াও, বুধবার পাঁচটি কোম্পানি—সমতা লেদার, গোল্ডেন সন, এসএস স্টিল, আমরা টেকনোলজিস ও আমরা নেটওয়ার্কস—জেড শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঘোষিত লভ্যাংশ যথাসময়ে বিতরণ করতে না পারার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাজার-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএসইসির নতুন নিয়মের কারণে দ্রুত বাড়ছে দুর্বল মানের কোম্পানির সংখ্যা, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য নেতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে, ২০২৪ সালে ৬০টির বেশি কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হয়েছে, যা বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগজনক। বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা কমে গেলে বাজারের ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংখ্যা বাড়ায় বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। এই ধরনের শেয়ার বাজারে সহজেই কারসাজির শিকার হয়, যেখানে কৃত্রিমভাবে দর বাড়িয়ে পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ফেলা হয়। গত সপ্তাহেও শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে ৫টিই ছিল জেড শ্রেণিভুক্ত, যার মধ্যে নিউলাইন ক্লথিংস, অ্যাপোলো ইস্পাত, নুরানী ডায়িং, রিংশাইন টেক্সটাইলস এবং রেনউইক যোগেশ্বর উল্লেখযোগ্য।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় কোম্পানির শ্রেণীকরণ নীতিমালার পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন। বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, "এক-তৃতীয়াংশ কোম্পানি জাঙ্ক শেয়ারে পরিণত হওয়া বাজারের জন্য অত্যন্ত খারাপ সংকেত। এটি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।"
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন আরও বলেন, "আইপিও নীতিমালার ব্যাপক পরিবর্তন এবং কোম্পানির শ্রেণিবিন্যাসের বিষয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরও কার্যকর ভূমিকা নেওয়া উচিত।"
শেয়ারবাজারে বর্তমান সংকট কাটাতে বাজার-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে আইপিও নীতিমালা সংশোধন, দুর্বল মানের কোম্পানির তালিকা পর্যালোচনা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বচ্ছ নীতিমালা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে বাজারে বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা আরও কমতে পারে, যা পুরো অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।