১১ জানুয়ারি ২০২৫ শনিবার, ০৫:৫৫ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
গত আট বছরে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার থেকে ১২ লাখেরও বেশি বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই প্রবণতা ২০২৪ সালে এসে রেকর্ড নিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মোট বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট ছিল ২৯ লাখ ২৯ হাজার ১৮৯টি, যা ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫২-এ। এতে আট বছরে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৩৭ জন বিনিয়োগকারী হারিয়েছে শেয়ারবাজার।
২০২৩ সালে বিও অ্যাকাউন্টধারী ছিলেন ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৪ জন। সে হিসাবে এক বছরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেছে ৯০ হাজারেরও বেশি। বিনিয়োগকারীদের মতে, বাজারের অস্থিরতা এবং অব্যাহত লোকসান তাদের আস্থা হ্রাসের মূল কারণ।
বিনিয়োগকারী তারেক মাহমুদ বলেন, "প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা টাকা হারাচ্ছেন। মূলত আর্থিক লাভের প্রত্যাশায় বিনিয়োগ করা হয়, কিন্তু ধারাবাহিক লোকসানে এখন কেউ আর বাজারে আস্থা পাচ্ছেন না।"
মার্জিন ঋণের বিষয়ে আরেক বিনিয়োগকারী আলতাফ হোসেন জানান, "বাজারে আগ্রহ থাকায় অনেকেই ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু শেয়ারের মূল্য কমতে থাকায় তারা মার্জিন ঋণের ফাঁদে পড়েছেন এবং ফোর্স সেলের কারণে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে বাজার ছেড়েছেন।"
ব্রোকারেজ হাউসগুলোতেও নেই পূর্বের কর্মচাঞ্চল্য। গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শাখা ব্যবস্থাপক আসাদ লিটন জানান, নতুন বিনিয়োগকারীরা আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অনেকেই লোকসান দিয়ে হলেও বাজার থেকে সরে যাচ্ছেন। যদি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে পুরো বাজার স্থায়ী ধসের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের এই বিমুখতার পেছনে বড় কারণ হিসেবে শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলার অভাবকে দায়ী করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, "বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাস হারিয়েছেন, অনেক বিও অ্যাকাউন্ট অকার্যকর হয়ে পড়েছিল, আর অনেকে টাকা তুলে চলে গেছেন। বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।"
বাজারে বিএসইসি কর্তৃক আরোপিত জরিমানার প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়। গত বছর নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির জন্য ৭২০ কোটি টাকার ওপর জরিমানা করেছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এক বছরে প্রধান সূচক কমেছে ১ হাজার পয়েন্টেরও বেশি এবং ঢাকার বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।