২২ ডিসেম্বর ২০২৪ রবিবার, ১১:১৩ এএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
শেয়ারবাজারে অস্থিরতার পেছনে প্লেয়ার-রেগুলেটরদের দোষ
অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শেয়ারবাজারে অস্থিরতার পেছনে প্লেয়ার ও রেগুলেটরদের অনেক দোষ আছে।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ব্যাংকিং অ্যালমানাকের ষষ্ঠ সংস্করণের প্রকাশনা উৎসবে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনছেন, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। আবার শেয়ার প্রাইস কমে গেলেই আন্দোলন করেন, আমি এর পক্ষে নই।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিবিএসকে বলা হয়েছে তথ্য যা আছে তাই প্রকাশ যেন হয়। এখানে কারচুপির কোনো ব্যাপার নেই। আমাদের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের মতো শেয়ারবাজারের অবস্থাও একই রকমের।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনছেন, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ এ শেয়ার মহা আনন্দে কিনছেন। নূন্যতম কোনো মূল্য নেই, এগুলো কয়েক দিন পরই ওয়েস্ট পেপার হিসেবে ব্যবহার হবে। এজন্য একটু কষ্ট করতে হবে। আমি বিনিয়োগকারীদের দায়ী করছি না। শেয়ারবাজারের প্লেয়ার ও রেগুলেটরদের অনেক দোষ আছে।
অর্থ উপদেষ্টা আরো বলেন, আমরা কোনো পাওয়ার দেখাতে আসিনি, একটা দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। বিগত ১৫ বছরের তথ্য নিয়ে নানা বিভ্রাট রয়েছে। তথ্য লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এগুলো পরিবর্তন ও সংস্কারের চেষ্টা করছি। কারণ দাতা সংস্থাগুলো আমাদের কাছে নানা প্রশ্ন করেন, তারা বোঝাতে চান আগেই কম ছিল ইত্যাদি। এ নিয়ে আমরা তাদের বোঝাচ্ছি আগের তথ্য লুকানো ছিল, আমরা সঠিকটা উপস্থাপন করছি।’
সাবেক সরকারের যোগসাজশে শেয়ারবাজারে লুটতরাজ : ড. হেলাল
শেয়ারবাজারে গত ১৫ বছরে যে অনিয়ম ও লুটতরাজ হয়েছে, তার সবই হয়েছে বিগত আওয়ামী সরকারের প্রশ্রয় ও যোগসাজসে। সাবেক সরকার প্রধানও এর দায় এড়াতে পারেন না। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ইনোভা সিকিউরিটিজের শাখা উদ্বোধন ও ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান ও শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ হেলাল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থসূচক সম্পাদক ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জিয়াউর রহমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, যখন গণতন্ত্র ও জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা থাকে না, নানা কৌশলে মানুষের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তৎকালীন সরকার এভাবে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তাদের অনুগত ও পা চাটা ব্যক্তিদের বিভিন্ন পদে বসিয়েছিল। শেয়ারবাজারও তার ব্যতিক্রম নয়।
তিনি বলেন, গত দেড় দশকে শেয়ারবাজারে শেয়ারের যোগান যতটা বেড়েছে, চাহিদা ততটা বাড়েনি। এ সময়ে বাজারে যেসব আইপিও এসেছে, তার বড় অংশই নিম্নমানের। এ কারণে বাজারে প্রকৃত চাহিদা তৈরি হয়নি। অনেকে অন্যের দেখাদেখি বিনিয়োগ করে পরে সব হারিয়ে বসে থাকে।
ড. হেলাল বলেন, বিএসইসির বর্তমান কমিশন বাজারে সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। যদি তারা বাজার ফাউল প্লে বন্ধ করতে পারে, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে, বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। আমি কমিশনকে বলেছি৷-ভালো শেয়ার নিশ্চিত না হয়ে বাজার নতুন শেয়ার না আনে। কারণ বাজারে ঘিয়ের চেয়ে ছাইয়ের দাম বেশি হলে ঘি নিয়ে কেউ সেই বাজারে আসবে না।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ভৈরব পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ, ভৈরব বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ব্যাংক এশিয়া পার্পেচ্যুয়াল বন্ডের কুপন রেট ঘোষণা
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক এশিয়া ফার্স্ট পার্পেচ্যুয়াল বন্ডের কুপন রেট ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ২৭ জুন ২০২৫ পর্যন্ত সময়ের জন্য ১০% কুপন রেট ঘোষণা করা হয়েছে।
কূপণ রেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আজ রোববার (২২ ডিসেম্বর) বন্ডটির লেনদেনের ওপর কোনো মূল্যসীমা থাকবে না।
ডিভিডেন্ড বিষয়ে সামিট পাওয়ারের কর ফাঁকি ১১১৩ কোটি টাকা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) সামিটের দুই প্রতিষ্ঠান ‘সামিট পাওয়ার’ ও ‘সামিট কর্পোরেশন’-এর বিরুদ্ধে প্রায় ১,১১৩ কোটি টাকার কর ফাঁকির অভিযোগ উত্থাপন করেছে।
একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, সামিট পাওয়ার লিমিটেড সুকৌশলে সামিট কর্পোরেশন লিমিটেডকে ডিভিডেন্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন করেনি। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, বিষয়টি সংক্রান্তভাবে এনবিআর থেকে জারি করা নোটিশ তারা আমলে নেয়নি। এতে স্পষ্ট হয় যে, কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে সামিট পাওয়ার কিছু কৌশল অবলম্বন করেছে। অপরদিকে, সামিট কর্পোরেশনও সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে ডিভিডেন্ড প্রদানের সময় আইনের পরিপন্থীভাবে উৎসে কর কর্তন করেনি।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সামিট পাওয়ার লিমিটেড মোট ডিভিডেন্ড দেওয়ার মাধ্যমে প্রায় ৪৬৫ কোটি টাকা উৎসে কর ফাঁকি দিয়েছে। এছাড়া, সামিট কর্পোরেশন লিমিটেডও এ সময়ে বিদেশি কোম্পানির (সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল) প্রতি ডিভিডেন্ড প্রদানের সময় ৬৪৭ কোটি টাকার উৎসে কর কর্তন করেনি। ফলে দুই প্রতিষ্ঠান ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত মোট ১,১১২ কোটি টাকার কর ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে।
এনবিআরএর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অতীতে কর ফাঁকির নানা কৌশল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন এবং সামিট গ্রুপের আয়কর ফাঁকির তথ্য খতিয়ে দেখছেন। এনবিআরের ২০১৩ সালের একটি আদেশ অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদক কোম্পানিগুলোকে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি দেওয়া হলেও ডিভিডেন্ড প্রদানের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে।
প্রবিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থিত কোম্পানিগুলোকে তাদের ডিভিডেন্ড প্রদানের সময় উৎসে কর কর্তন করতে হয়। কিন্তু সামিট গ্রুপ এ নিয়ম লংঘন করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এনবিআরের আইনি বিভাগের মাধ্যমে আবারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যায্য কর পরিশোধ করতে বাধ্য করা হয়।
ক্যাটাগরি স্থানান্তর আরো এক কোম্পানির
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সায়হাম টেক্সটাইলের ক্যাটাগরি স্থানান্তর করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ৩০ জুন ২০২৪ সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। এজন্য কোম্পানিটিকে ‘এ’ থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
২২ ডিসেম্বর রোববার থেকে কোম্পানিটির কার্যক্রম ‘বি’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু হয়।
প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করবে মীর আকতার
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মীর আকতার হোসেনের পরিচালনা পর্ষদ প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, কোম্পানিটি কিউমুলেটিভ, নন-পার্টিসিপেটিভ, ফুল্লি রিডেম্বল প্রেফারেন্স শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিটি ২৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি লোন পরিশোধ করবে।
কোম্পানির বিনিয়োগকারী এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদনের পর এই শেয়ার ইস্যু করবে।
এজন্য বিশেষ সাধারণ সভার (ইজিএম) আহবান করেছে কোম্পানিটি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় হাইব্রিড প্লাটফর্মে এই ইজিএম অনুষ্ঠিত হবে।
এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ জানুয়ারি।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।