২৯ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার, ১১:১৭ এএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
বাজারে এখন নতুন আলুর সরবরাহ বেড়েছে। পাশাপাশি পুরনো আলুর সরবরাহও পর্যাপ্ত। এর পরও দাম বাড়ছে। রাজধানীর বাজারে দাম বেড়ে পুরনো আলুর কেজি এখন ৭৫ টাকা ছাড়িয়েছে।
পাঁচ বছরে আলুর রেকর্ড দামপাঁচ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম পুরনো আলুর দাম কেজিতে ৭৫ টাকা ছাড়াল। এক বছর আগে ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর বাজারে আলুর কেজিপ্রতি মূল্য ছিল ৪৫ টাকার মধ্যে।
কভিড পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের একই সময় দেশে আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি ৫০ টাকা। বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কিছুটা কমলেও এখনো চড়া দামেই দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
কম্পানিগুলো তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বাজারের দোকানগুলোতে এখনো বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত মজুদদারদের কারসাজির কারণেই এবার আলুর দামের এমন অবস্থা। কোনো কারণ ছাড়াই তারা আলুর দাম বাড়াচ্ছে। কৃষক পর্যায় থেকে নামমাত্র মূল্যে আলু কিনে মজুদ করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, বাড্ডা ও রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে দাম বেড়ে প্রতি কেজি পুরনো আলু ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট পেঁয়াজসহ পেঁয়াজপাতা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি কেজি ২৭০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাড্ডার খুচরা আলু বিক্রেতা আব্দুস সামাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে এখন আলুর সরবরাহ সংকট রয়েছে।
এতে হিমাগার পর্যায়ে কয়েক দফা দাম বাড়ানো হয়েছে। মূলত এসব কারণেই আলুর দাম বেড়েছে। বাজারে অল্প পরিসরে নতুন আলু আসছে, আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে দাম নেমে যাবে।’
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বৃহস্পতিবারের বাজার দরের তথ্য বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে আলুর দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমে মানভেদে ১১৫ থেকে ১৩০ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ‘কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলুর দাম প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। আমদানি করলেও কোনোভাবেই ৪০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। কিন্তু ব্যবসায়ী ও কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা আঁতাত করে এবার দাম বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন। কারণ এবার আলুর সরবরাহ সংকট ছিল। তবে আগামী মাসে পুরোদমে বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ শুরু হলে দাম কমে আসবে।’
হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের হিসাবে দেশে আলুর সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। এর পরও আমাদের স্টোরেজ ২০ শতাংশ পর্যন্ত খালি ছিল। তাই এবার বাজারে আলুর সংকট আছে। সেটার সুযোগে মজুদদাররা দাম বাড়িয়েছেন। আমরা শুধু স্টোরেজ মালিক হিসেবে ভাড়া আদায় করে থাকি। এখানে আলু মজুদ করেন ব্যবসায়ীরা, আমরা না। কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা ভাড়া পাই আমরা।’
যদিও কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা ৮০ লাখ টন। আর বিবিএসের হিসাব মতে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আলুর উৎপাদন ছিল এক কোটি ছয় লাখ টনের কিছু বেশি, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় দুই লাখ টন বেশি। ফলে চাহিদা মিটিয়ে আলু উদ্বৃত্ত থাকার কথা ২৬ লাখ টনের বেশি। কিন্তু উল্টো আলু আমদানি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
বাজারে সব ধরনের শীতের সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও কিছুটা কমেছে। তবে গত কয়েক মৌসুমের তুলনায় অনেকটাই বাড়তি দামে শীতের সবজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, নতুন ডায়মন্ড জাতের আলু ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
সরবরাহ বাড়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে আলু-পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। আলু ও পেঁয়াজের আমদানি বাড়ায় ও দেশের বাজারে পাতা পেঁয়াজ উঠতে শুরু করায় বন্দর অভ্যন্তরে পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা দাম কমেছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।