০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ মঙ্গলবার, ১০:১৫ এএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পেরিয়ে বছিলা তিন রাস্তার মোড় থেকে বাঁ দিকে যেতে হবে। বেড়িবাঁধের প্রধান সড়ক দিয়ে এগোলে রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের কাছে গড়ে উঠেছে সাদেক খান কৃষি মার্কেট। স্থানীয় লোকজন অবশ্য একে আড়তই বলে বেশি। অনেক পণ্য এখানে কারওয়ান বাজারের চেয়েও কম দামে মেলে।
সেই বাজারে আমরাও এসেছি। বেড়িবাঁধে উঠেই ধাক্কা খেলাম। এ যে দেখি ধুলাবালুর সাম্রাজ্য। গলায় মাফলার ছিল, তাতেই নাক-মুখ পেঁচিয়ে বাজারে নামলাম।
তাজা শাকসবজি, নদীর মাছ, মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যই এখানে পাবেন। পাইকারি দরে বিক্রি হয় বলে এক কেজির কম সদাই নেওয়ার সুযোগ নেই। রায়েরবাজারের বাসিন্দা কানিজ আমীন জানান, নিজেদের নিত্যদিনের বাজারের সিংহভাগই আসে এখান থেকে। পাইকারি দরে এক পাল্লা মানে ৫ কেজি করে আলু, পেঁয়াজ কিনে রাখেন। মাছ-মাংস নিজেরাই পছন্দ করে কেনেন। মুরগি কেনার দরকার হলে আসারও দরকার পড়ে না। ফরমাশ দিলে পরিচিত দোকানদার নিজেরাই লোক দিয়ে মুরগি জবাই থেকে শুরু করে মাংস প্রস্তুত করে সরাসরি বাসায় দিয়ে যায়। আগ বাড়িয়ে বাড়তি সবজি কেনার প্রয়োজন পড়ে না। যখনই দরকার হয়, বাজার থেকেই তরতাজা নিয়ে আসেন।
বাজারে এখন নতুন আলু। হলদে আর লাল—দুই আলুর উপস্থিতিই বেশি। প্রতি কেজি ২০ টাকা। পাল্লা হিসাবে প্রতি ৫ কেজি আলুর দাম এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আকারে ছোট গুটি আলু পাওয়া যাচ্ছে প্রতি ৫ কেজি ৫০ টাকা। আছে গোল গোল ছোট আকারের বগুড়ার লাল আলু। দাম প্রতি ৫ কেজি ১৫০ টাকা। বস্তায় বস্তায় আলু নেওয়ার প্রয়োজন হলে দর-কষাকষিতে প্রতি কেজির দাম ১৬ থেকে ১৪ টাকায় নামিয়ে আনা যায়।
বস্তায় আলু মেপে বিক্রির কৌশলটাও সুন্দর, আলুর বস্তা মাথায় নিয়ে সরাসরি ওজন মাপার মেশিনে উঠে যান দোকানের একজন! উঠেই নিজের ওজন বিয়োগ করে উচ্চ স্বরে শুধু আলুর ওজন বলে দিচ্ছেন ৫৫ কেজি কিংবা ৬০ কেজি। ওজন মাপা বস্তা পাশেই স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। ওজন মাপা শেষে প্রতিটি বস্তার কোনায় ক্রেতার নাম লিখে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। কখনোবা কালো কালির ব্রাশে বস্তার গায়ে বড় করে ক্রেতার নামের প্রথম অক্ষর লিখে দেওয়া হয়। পণ্য গাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য লোক আছেন। তাঁদেরই একজন বরিশালের আবদুল মালেক। তিনি জানান, ক্রেতার পণ্য গাড়িতে তুলে দিতে পান বস্তাপ্রতি ২০ টাকা।
ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা আর নাটোর থেকে আসে পেঁয়াজ আর রসুন। পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৪০-৪২ টাকা। রসুন ১৯০ থেকে ২১০ টাকা। আদার দাম ৭০ থেকে ১৩০ টাকা।
শীতের মৌসুম থাকায় বাজারে সবজির সরবরাহ ভালো, দামও কম। শীতের মধ্যে প্রথম সারিতে আছে শিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, শালগম, লাউ, মুলা, বিটরুট, মটরশুঁটি ইত্যাদি। আকারভেদে প্রতিটি ফুলকপি ১০-২০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫-২০ টাকা ও ব্রকলি ১৫-৩০ টাকা। এ ছাড়া প্রতিটা শালগম ৫ টাকা, টমেটো ১৫-৩০ টাকা কেজি, মিষ্টিকুমড়া ১৪-২৩ টাকা, ১০ আঁটির এক থোকা পেঁয়াজকলি ৫০ টাকা; জাতভেদে শিম ১০-৩০ টাকা; শসা ও ক্ষীরা ২০-৩০ টাকা। লম্বা, গোল, সবুজ কিংবা বেগুনি বেগুনের দাম ৩০-৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ঝিঙে ৪০ টাকা। লাউ ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচু জোড়া ৫০ টাকা, লতি প্রতি কেজি ৫০ টাকা। চালকুমড়া আর স্কোয়াশ প্রতিটি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে মুলা, কেজি ২ থেকে ১০ টাকা। আছে লালশাক, ডাঁটাশাক, কলমিশাক, পালংশাক, বথুয়াশাক, মেথিশাক, ঘাগরাশাক, কচুশাক, লাউশাক, মিষ্টিকুমড়া শাক। কলার মোচা, কলার থোড়ও আছে। আরও আছে থানকুনিপাতা, পেঁয়াজপাতা, পেঁয়াজকলি, ধনেপাতা। আঁটি হিসাবে দাম ৫ থেকে ১৫ টাকা।
সাদার বাইরে আছে রঙিন ফুলকপি, বেগুনি শালগম, বেগুনি বিটরুট। ৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে সাদাটে সবুজ শালগম। পাশেই চোখধাঁধানো বেগুনি রঙের শালগমের দাম ৬ টাকা। সাদা ফুলকপি ১০ টাকা, ব্রকলি ২০-৩০ টাকা। বেগুনি আর হলুদ ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৯০ টাকায়। এ ছাড়া হলুদ পাপড়ির কুমড়া ফুল এক কুড়ি মানে ২০টির দাম ২০০ টাকা। লালচে বেগুনি রঙের ১০টি বিটরুটের দাম ২০০ টাকা।
মাছের বাজার বসে ভোর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মাছের বাজারে পা রাখতেই জীবন্ত মাছগুলো লেজ দিয়ে পানি ছিটিয়ে স্বাগত জানাল। জীবন্ত মাগুর মাছ ১৭০ টাকা কেজি, পাঙাশ ১৬০-১৮০ টাকা, কই মাছ ২০০-২৫০ টাকা, রুই ২০০-২৮০ টাকা, মৃগেল ৩০০-৩২০ টাকা, সিলভার কার্প ২০০-২২০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৩০০ টাকা, শোল ৭৫০-৮০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ টাকা, চাপিলা ১৪০ টাকা, পোয়া মাছ ২২০ টাকা, পাবদা ৩৩০-৩৫০ টাকা, টাকি মাছ ১২০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০-১২০ টাকা, চান্দা মাছ ৩৫০-৪০০ টাকা, বাটা মাছ ১৪০ টাকা, বেলে মাছ ২৫০ টাকা কেজি। কোথাও আবার গুঁড়া মাছের ভাগা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। কাটা মাছও বিক্রি হয়। কাটা পাঙাশ পাবেন ১৪০ টাকার মধ্যে।
মূল বাজার থেকে রাস্তায় উঠে হাতের বাঁয়ে গেলেই হাঁস-মুরগির বিশাল আড়ত। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা। সোনালি মুরগি ২৮০-৩১০ টাকা। আছে দেশি, চীনা, বেলজিয়াম, খাকি ক্যাম্পবেল, রাজহাঁসসহ অনেক প্রজাতির হাঁস। দেশি হাঁস ৪৫০-৬৫০ টাকা, চীনা হাঁস ৫৫০ টাকা, বেলজিয়াম ২৬০ টাকা, খাকি ক্যাম্পবেল ৫০০-৬০০ টাকা, রাজহাঁস ৬৫০ টাকা। পাশের একটি দোকানেই মুক্ত অবস্থায় প্রায় ২০ জোড়া কবুতর। আছে অস্ট্রেলিয়ান ঘুঘু। কবুতরের বাচ্চা বিক্রি হয় এখানে জোড়া ৩৫০ টাকা। হাঁস কিংবা মুরগি কেনার পর কেটেকুটে মাংস প্রস্তুত করে নিতে পারেন। প্রতি হাঁস বা মুরগি কাটায় ৫ টাকা।
১. বাজার অনুপাতে থলে নিয়ে যাবেন।
২. ধুলা অনেক, তাই মাস্ক নিতে ভুলবেন না।
৩. কাদাপানি ডিঙিয়ে চলতে হতে পারে, মানানসই জুতা পরে নেবেন।
৪. দরদাম করে কিনতে হবে।
৫. সহজে পচনশীল নয় এমন পণ্য যেমন আলু, পেঁয়াজ পাল্লা হিসাবে কিনুন। এতে সাশ্রয় হবে বেশি।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।