৩০ জানুয়ারি ২০২৫ বৃহস্পতিবার, ০৬:১৩ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
কদিন আগে পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম সেন্ট মার্টিনে। ভালো–মন্দ মিলিয়ে মিশ্র এক অভিজ্ঞতা। সেটাই শেয়ার করলাম আজ। যাঁরা যাওয়ার কথা ভাবছেন একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।
১. তবু অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক
দ্বীপটায় মানুষ যায় ‘পঙ্গপালের’ মতো। ডিসেম্বর, জানুয়ারি—এবার এই দুই মাস ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে আমাদের কারও যেন হুঁশ নেই (আমি নিজেও বেহুঁশ হয়েছিলাম)। প্রতিদিন দুই হাজার মানুষ যাওয়ার কথা। সেখানে কমসে কম ৭–৮ হাজার মানুষ যাচ্ছে হররোজ। জাহাজে, জেটিঘাটে, সৈকতে, রিসোর্টে, খাবারের দোকানে সর্বত্র গাদাগাদি। তিলধারণের ঠাঁই নেই কোথাও।
এর থেকেও বিরক্তিকর দীর্ঘ সময় ধরে জাহাজে ভ্রমণের ক্লান্তি। নতুন এই হুজ্জত এবারই শুরু হয়েছে। আগে টেকনাফ থেকে আড়াই–তিন ঘণ্টায় যাওয়া যেত। এখন কক্সবাজার থেকে জাহাজ ছাড়ে। পৌঁছাতে কম করে হলেও সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লেগে যায়। জাহাজে ওঠানামার কথা ভাবলেই তো গায়ে জ্বর আসে।
২. ছেড়া দ্বীপ
প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ছেড়া দ্বীপে যাওয়া নাকি নিষেধ। সকাল ৭টা থেকে কোস্টগার্ড দাঁড়িয়ে যায় সেন্ট মার্টিনের একেবারে দক্ষিণপ্রান্তে, যেখান থেকে টুকরা ছোট ছোট তিনটি দ্বীপে যাওয়ার সরু রাস্তাটার শুরু। ভাটার সময় রাস্তাটা জেগে উঠে, জোয়ারে তলায়। জোয়ারের সময় খুদে দ্বীপগুলোতে যাওয়া যায় না। সেই ভোরবিহানে অন্ধকার থাকতে লোকজন মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশে রওনা দেয়। কারণ, বেলা হলেই আটকে দেবে কোস্টগার্ড। শত শত, হাজারে হাজার মানুষ, লাইন ধরে ছুটছে সবাই। নিঝুম দ্বীপ ডিঙিয়ে ছেড়া দ্বীপ, সবশেষে প্রবাল দ্বীপ। সেখানে পাথরের ওপর বসে–শুয়ে–দাঁড়িয়ে চলে সূর্যোদয় দেখার মচ্ছব। পথে যেতে যেতে চোখ আটকে পড়ে প্লাস্টিকের বোতলের স্তূপে। জোয়ারে এনে রেখে গেছে মানুষের ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট।
একদল যা তা সাগরের পানিতে ছুঁড়ে ফেলছে। আরেকদল নিজের টাকায় দ্বীপটিতে গিয়ে সেসব কুড়িয়ে মূল ভূখণ্ড নিয়ে আসছে। এই হচ্ছে মানুষে মানুষে ফাঁরাক।
৩. সারমেয় বৃত্তান্ত
সেন্ট মার্টিনের যেখানেই যাবেন, চোখে পড়বে দলে দলে কুকুর। সংখ্যাটা চোখে পড়ার মতো। পর্যটকেরা অনেকে ভয় পান। খাবারের লোভে প্রায়ই পর্যটকদের ছেঁকে ধরে কুকুরগুলো। এদের অন্যত্র স্থানান্তরের কি কোনো উপায় নেই? এটা তো বাস্তুসংস্থানের জন্যও প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করবে। কোনো কিছুর সংখ্যাধিক্য মানেই অন্য অনেক কিছুর ওপর বাড়তি চাপ।
৪. বামুন নারকেল
একসময় সেন্ট মার্টিনকে মানুষ নারকেল জিঞ্জিরা নামে ডাকত। প্রমাণসাইজের ডাবও পাওয়া যেত দেশের সর্বদক্ষিণের এই দ্বীপটিতে। বছর দশেক আগে দ্বীপে বসে তেমনি একটি ডাব খাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার নিজেরই আছে। কিন্তু এবার গিয়ে অবাক হলাম! ছোট ছোট ডাব ঝুলছে। একেকটার দাম হাঁকছে এক–দেড় শ টাকা।
—বিষয় কী ভাই? এট্টুকু ডাবের এত দাম কেন? জানতে চাইলাম।
—জবাবে দোকানি ছেলেটা বলল, দ্বীপে এখন ডাব হয় না।
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম পাশে বসা বয়োবৃদ্ধ মানুষটির দিকে। বললেন, বছর তিনেক আগে একটা ঝড় হয়েছিল। তারপর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ডাব আর তেমন হয় না। এখন টেকনাফ থেকে ডাব আনা হয়।
৫. অত্যাচার
একদল আছে সকাল নাই, বিকাল নাই সৈকতে মোটরবাইক চালাবে। রাতের আঁধার চিড়ে বিকট আওয়াজ তুলে ছুটে চলে মোটরবাইকগুলো। সৈকতের কাছে চেয়ারে এদের যন্ত্রণায় বসা দায়। এসব বাইকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মরে কাকড়াসহ নানা জলজ প্রাণীর ডিম, বাচ্চা। একই কথা সৈকতজুড়ে চালানো বাইসাইকেলের ক্ষেত্রেও খাটে। সাগরের পানিঘেঁষেই কেন সাইকেলগুলো চালাতে হবে?
সরকার খুলে দিয়েছে বলে আমরাও কী খুল্লামখোল্লা হয়ে নেমে পড়ব? নিজেদের এতটুকু বিচার–বিবেচনা নাই? আর সরকারই বা নজর দিচ্ছে না কেন!? এত হুজ্জত, এত দিকদারি জানলে পরিবার নিয়ে আমি কস্মিনকালেও যাওয়ার কথা ভাবতাম না। এর চেয়ে মেরিন ড্রাইভ ধরে মাইলের পর মাইল ঘুরলে দিব্যি চারটা দিন কাটিয়ে দেওয়া যেত।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।