facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ০১ নভেম্বর শুক্রবার, ২০২৪

Walton

হকির শাস্তি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ


২৮ মে ২০২৪ মঙ্গলবার, ০৯:১২  এএম

ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ার বিজনেস24.কম


হকির শাস্তি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ

আড়াই বছর পর নীল টার্ফে হকি ফিরলেও বেশির ভাগ ম্যাচেই ছিল বিশৃঙ্খলা। বাজে আম্পায়ারিং, বারবার খেলা বন্ধ হওয়া ও খেলোয়াড়দের মেজাজ হারানো; এর সবই ছিল প্রিমিয়ার বিভাগ হকিতে।

বাইলজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শনিবার নির্বাহী কমিটির সভায় সমান পয়েন্ট পাওয়া আবাহনী ও মেরিনার্সকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে ফেডারেশন। তবে কোচ, খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা মিলে ৩১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দেওয়া শাস্তি নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। কাউকে কারণ দর্শানো নোটিশ কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই দেওয়া হয়েছে শাস্তি।

ডিসিপ্লিনারি কমিটি নিয়েই প্রশ্ন: শাস্তি দেওয়ার আগে করতে হয় তদন্ত কমিটি। গঠন করতে হয় ডিসিপ্লিনারি কমিটি। স্বচ্ছতার জন্য যারা এই কমিটিতে থাকেন, তাদের নাম আগেই ঘোষণা করা হয়। যেমনটি ক্রিকেট-ফুটবলে দেখা গেছে। কিন্তু হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে কারা আছেন, তাদের নাম গোপন রেখেছেন। ‘যারা এই কমিটিতে আছেন, তাদের অনুরোধ যেন নামগুলো প্রকাশ না করা হয়। সে জন্যই আমরা তা গোপন রেখেছি। আর ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে কারা আছেন, তাদের নাম প্রকাশ করতেই হবে, এটা কোন আইনে আছে?’

সাঈদের এ কথার পর প্রশ্ন উঠেছে– আদৌ কোনো কমিটি হয়েছে কিনা। খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেটার সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কিনা; অনেকেই এটা নিয়ে সন্দেহে। আবার কথিত ডিসিপ্লিনারি কমিটি যে গঠন করা হয়েছে, তা ফেডারেশনের অনেকেই জানেন না। বিশ্বস্ত কয়েকটি সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, শাস্তির ব্যাপারটা স্বয়ং সাধারণ সম্পাদকই দেখেছেন। তাঁর একক সিদ্ধান্তেই নাকি শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যে ডিসিপ্লিনারি কমিটির কথা বলা হচ্ছে, সেখানে নাকি তিনিও আছেন।

মূলত লিগ কমিটিতে যারা থাকেন, তাদের থেকেই করা হয়েছে ডিসিপ্লিনারি কমিটি। এটা যদি হয়, স্বাভাবিকভাবেই স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, যেটা উঠেছেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অফিসিয়ালি ডিসিপ্লিনারি কোনো কমিটিই নেই, ‘সাধারণ সম্পাদক ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান গোপনে এই কমিটি করে শাস্তি দিয়েছেন। পুরোটাই সাধারণ সম্পাদক দেখেছেন এবং যা হয়েছে সবকিছু তাঁর একক সিদ্ধান্তে।’ যাদের বেশি শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেই মোহামেডান কর্মকর্তারাও ডিসিপ্লিনারি কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

শাস্তির বিষয়টি এজেন্ডাতে ছিল না: নির্বাহী কমিটির সভা মানেই ফেডারেশনের সভাপতি উপস্থিত থাকবেন। আর মিটিংয়ের এজেন্ডাগুলো আগেই সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সভাপতির অনুপস্থিতিতেই শনিবার হকির কার্যালয়ে নির্বাহী কমিটির সভাতে বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। যে মিটিংয়ের সভাপতিত্ব করেছেন সহসভাপতি আব্দুর রশিদ শিকদার। সভাপতির অনুপস্থিতিতে তিনি শাস্তির বিষয়গুলো বোর্ডে অনুমোদন করতে চাননি বলে জানিয়েছেন মিটিংয়ে উপস্থিত থাকা এক কর্মকর্তা। এটা নিয়ে সভায় এক ঘণ্টার মতো দেরি হয়েছে।

মিটিংয়ে উপস্থিত থাকা একজন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শাস্তি সম্পর্কিত বিষয়গুলো মিটিংয়ের এজেন্ডাতেই ছিল না, ‘এজেন্ডার মধ্যে এগুলো কিছুই ছিল না। পরে একটা সাদা কাগজে হাতে লেখা এজেন্ডা দিয়েছে। আমি শুধু জেনেছি, শনিবার দুপুর ১২টায় নির্বাহী কমিটির সভা হবে। যেখানে সভাপতিত্ব করবেন বিমানবাহিনীর প্রধান এবং ফেডারেশনের সভাপতি এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান। মিটিংয়ে সভাপতি আসেননি। তাঁকে ছাড়া এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেও সমীচীন হয়নি। (শনিবার) মিটিংয়ের সভাপতিত্ব করা রশিদ শিকদার বারবার বলেছেন, এগুলোর সিদ্ধান্ত আমার নেওয়ার এখতিয়ার নেই।’

লঘু পাপে গুরু দণ্ড: নিষেধাজ্ঞার কারণে ১৯ এপ্রিল আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে ছিলেন না মোহামেডানের অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে যারা মারামারিতে জড়িয়েছেন, তাদের শাস্তি হওয়ার কথা বেশি। কিন্তু ঘটনাবহুল সেই ম্যাচে না থাকা জিমিকে ১২ ম্যাচের জন্য বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। অধিনায়ক হওয়ায় ম্যাচে রিভিউ নেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধেই। কিন্তু ফেডারেশনের দাবি, জিমির কারণে লিগে বিশৃঙ্খলা বেশি হয়েছে।

ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে জিমিকে এত ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়াকে অনেকে ব্যক্তিগত আক্রোশ হিসেবে দেখছেন। মোহামেডান হকি কমিটির চেয়ারম্যান মনজুরুল আলমের কাছে এই শাস্তি একটা ক্লাবকে ধ্বংসের পাঁয়তারা হিসেবে মনে হচ্ছে, ‘আমি মনে করি, এটা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে করা হয়েছে। যে জিমি মাঠে ছিল না, তাকে কীভাবে ১২ ম্যাচ নিষিদ্ধ করল। আর মালয়েশিয়া থেকে আসা গোবিনাথানকে বাংলাদেশের হকিতে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা তো পুরো দেশের ভাবমূতি ক্ষুণ্ন করেছে। তাই এ ধরনের কর্মকর্তা দিয়ে কোনোদিন হকি এগোতে পারবে না।’

সাধারণ সম্পাদক সাঈদ বলছেন– শাস্তিটা ঠিকই ছিল, ‘জিমির কারণে খেলা ২১৬ মিনিট বন্ধ ছিল। জিমি কতবার খেলা বন্ধ করেছে ভিডিওগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন।’

খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছেন মাঠের আম্পায়াররা। কিন্তু খেলার মাঠে না থেকেও সাজেদ এ আদেল এবং তারেক এ আদেলকে আজীবন বহিষ্কার করায় হকি অঙ্গনেই সমালোচনা হচ্ছে। অনেকের মতে, ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে সাধারণ সম্পাদক এ দু’জনকে বহিষ্কার করেছেন। ‘নিয়ম হলো প্রথমে দোষী সাব্যস্ত করতে হয়, তার পর তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেবে, কমিটি করতে হবে। হঠাৎ করে তাদের নিষিদ্ধ করা হলো। সাধারণ সম্পাদক একক ক্ষমতা বলে সবকিছু করেছেন’– বলেছেন মিটিংয়ে উপস্থিত থাকা এক সদস্য।

ক্রীড়ামন্ত্রীর কাছে যাবে মোহামেডান: খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে হকি ফেডারেশন। এই শাস্তিটা কোনোভাবে মানতে পারছেন না ক্লাবটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে দু-এক দিনের মধ্যেই বসবেন ক্লাব কর্তারা। আদালতে না গিয়ে শুরুতে ফেডারেশনে আপিল করবেন তারা।

সেখানে সুবিচার না পেলে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন ক্লাবটির হকি কমিটির চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম, ‘আমরা কোনোদিন মাঠের বাইরে চ্যালেঞ্জ করতে যাব না, যা করব মাঠের মধ্যেই করব। আমার ব্যক্তিগত অভিমত আপিল করব। এর পর ফেডারেশনের প্রতিক্রিয়া দেখব। এই মুহূর্তে আদালতে যাব না। নেতিবাচক চিন্তা করছি না। আমি আদালতকে কেন খেলার মাঠে আনব? ফেডারেশনের ওপরে মন্ত্রী আছেন। তাঁর দুয়ার তো খোলা আছে।’

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: