১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বৃহস্পতিবার, ০৭:২৮ পিএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সরকার এই কর্মসূচি মোকাবিলায় কঠোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও প্রস্তুতি ৪ আগস্ট সকালে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে সেনা, বিমান, নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা অংশ নেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের ঠেকানো হবে। সেদিন সন্ধ্যায় গণভবনে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
কারফিউ ও কঠোর দমন অভিযান পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৪ আগস্টের বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য কঠোর কারফিউ জারির ঘোষণা দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের দমন করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানান।
সেনাবাহিনীর নীরব ভূমিকা ও পুলিশের প্রাণঘাতী হামলা ৫ আগস্ট সকালে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন থাকলেও তারা বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়নি। একটি সূত্র বলছে, সেনাবাহিনী আগে থেকেই জানত যে সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে, তবে পুলিশ এ বিষয়ে অন্ধকারে ছিল এবং সরকারের প্রতি অনুগত থেকে প্রাণঘাতী অভিযান চালিয়ে যায়। পুলিশের এক কমান্ডার বলেন, ‘সেদিন সকাল থেকেই সেনাবাহিনী জানত, শেখ হাসিনার পতন হয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ জানত না। তাই পুলিশ তখনো সরকারকে রক্ষা করতে সর্বাত্মকভাবে মাঠে ছিল।’
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের হামলা ও গুলি ওএইচসিএইচআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। চানখাঁরপুল, শাহবাগ, রামপুরা ব্রিজ, আজমপুর ও আশুলিয়ায় পুলিশের হামলায় বহু শিক্ষার্থী আহত ও নিহত হন। ১২ বছর বয়সী এক শিশু জানায়, আজমপুরে সে অন্তত এক ডজন মৃতদেহ দেখেছে।
অপ্রকাশিত বার্তা ও ষড়যন্ত্র প্রতিবেদন অনুসারে, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর তৎকালীন প্রধান বিজিবির মহাপরিচালককে ৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে দুটি গোপন হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠান, যেখানে সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা আদেশের রূপরেখা তুলে ধরা হয়।
পরিণতি ও নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের কঠোর পদক্ষেপ সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা ঢাকায় প্রবেশ করে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ওএইচসিএইচআর এই দমন অভিযানের তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তুলেছে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।