০৭ মার্চ ২০২৫ শুক্রবার, ১১:০৯ এএম
ডেস্ক রিপোর্ট
শেয়ার বিজনেস24.কম
![]() |
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় তল্লাশি চৌকিতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে মারধর, মুঠোফোন ও ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেওয়া—এমন ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, গত ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ওপর ২২৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের সংঘবদ্ধ ‘মব’ হামলা শুধু আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি নয়, এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তারও বড় সংকেত।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের ওপর ২২৫টি হামলার মধ্যে ৭০টি উল্লেখযোগ্য আলোচনার সৃষ্টি করেছে। মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ২৪টি, অক্টোবরে ৩৪টি, নভেম্বরে ৪৯টি, ডিসেম্বরে ৪৩টি, জানুয়ারিতে ৩৮টি এবং ফেব্রুয়ারিতে ৩৭টি হামলার ঘটনা ঘটে।
বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ মব তৈরি করে এ হামলাগুলো সংঘটিত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল বা অপরাধী গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা লক্ষ করা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষও গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে দেশে গণপিটুনির ঘটনায় ১১৯ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন।
গত এক সপ্তাহে দেশে অন্তত চারটি থানায় হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ৪ মার্চ ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে এক আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। হামলাকারীরা ছিলেন আসামির পরিবারের সদস্য। একইভাবে ৫ মার্চ ঠাকুরগাঁওয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে হাতকড়াসহ এক আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতার পালাবদলের সম্ভাবনা সামনে রেখে কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। এতে করে পুলিশের কার্যক্রমে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম এক বক্তব্যে বলেন, “ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী সরকারের কারণে পুলিশ আইনের প্রয়োগ করতে গিয়ে জনগণের প্রতিরোধের শিকার হচ্ছে। নাগরিক সমাজের প্রতি অনুরোধ, পুলিশকে সহযোগিতা করুন।”
এদিকে, পুলিশের ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এসব ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়েরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বারবার হামলা হলে অপরাধীরা ভয় হারিয়ে ফেলবে, যা দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক নেতাদের আশীর্বাদ নিয়ে কেউ যেন অপরাধীদের রক্ষা করতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সংঘবদ্ধ মব হামলা ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আরও কঠোর হতে হবে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়তে পারে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।